ترجمة سورة غافر

الترجمة البنغالية

ترجمة معاني سورة غافر باللغة البنغالية من كتاب الترجمة البنغالية.
من تأليف: د. أبو بكر محمد زكريا .

হা-মীম [১]।
____________________
[১] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন এক জেহাদের রাত্রিকালীন হেফাযতের জন্যে বলেছিলেন, রাত্ৰিতে তোমরা আক্রান্ত হলে حم لَا يُنْصَرُوْنَ পড়ে নিও। অর্থাৎ হা-মীম শব্দ দ্বারা দো'আ করতে হবে যে, শত্রুরা সফল না হোক। কোন কোন রেওয়ায়েতে حم لَا يُنْصَرُوْنَ (নুন ব্যতিরেকে) বর্ণিত আছে। এর অর্থ এই যে, তোমরা হা-মীম-বললে শত্রুরা সফল হবে না। এ থেকে জানা গেল যে, হা-মীম শক্ৰ থেকে হেফাযতের দুর্গ। [তিরমিয়ী ১৬৮২, আবু দাউদ: ২৫৭৯]
এ কিতাব নাযিল হয়েছে আল্লাহর কাছ থেকে যিনি পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞ---
পাপ ক্ষমাকারী, তাওবা কবুলকারী, কঠোর শাস্তি প্রদানকারী, অনুগ্রহ বর্ষনকারী। তিনি ব্যতীত কোন সত্য ইলাহ্ নেই। ফিরে যাওয়া তাঁরই কাছে।
আল্লাহর আয়াতসমূহে বিতর্ক কেবল তারাই করে যারা কুফরী করেছে; কাজেই দেশে দেশে তাদের অবাধ বিচরণ যেন আপনাকে ধোঁকায় না ফেলে।
তাদের আগে নূহের সম্প্রদায় এবং তাদের পরে অনেক দলও মিথ্যারোপ করেছিল। প্ৰত্যেক উম্মত নিজ নিজ রাসূলকে পাকড়াও করার সংকল্প করেছিল এবং তারা অসার তর্কে লিপ্ত হয়েছিল, তা দ্বারা সত্যকে ব্যর্থ করে দেয়ার জন্য। ফলে আমি তাদেরকে পাকড়াও করলাম। সুতরাং কত কঠোর ছিল আমার শাস্তি!
আর যারা কুফরী করেছে, এভাবেই তাদের উপর সত্য হল আপনার রবের বাণী যে, এরা জাহান্নামী।
যারা ‘আরশ ধারণ করে আছে এবং যারা এর চারপাশে আছে, তারা তাদের রবের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে প্ৰশংসার সাথে এবং তাঁর উপর ঈমান রাখে, আর মুমিনদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে বলে, 'হে আমাদের রব! আপনি দয়া ও জ্ঞান দ্বারা সবকিছুকে পরিব্যাপ্ত করে রেখেছেন। অতএব যারা তাওবা করে এবং আপনার পথ অবলম্বন করে আপনি তাদেরকে ক্ষমা করুন। আর জাহান্নামের শাস্তি হতে আপনি তাদের রক্ষা করুন।।
'হে আমাদের রব! আর আপনি তাদেরকে প্রবেশ করান স্থায়ী জান্নাতে, যার প্রতিশ্রুতি আপনি তাদেরকে দিয়েছেন এবং তাদের পিতামাতা, পতি-পত্নী ও সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে যারা সৎকাজ করেছে তাদেরকেও ৷ নিশ্চয়ই আপনি পরাক্রমশালী, প্ৰজ্ঞাময়।
'আর আপনি তাদেরকে অপরাধের শাস্তি হতে রক্ষা করুন। সেদিন আপনি যাকে (অপরাধের) খারাপ পরিণতি হতে রক্ষা করবেন, তাকে অবশ্যই অনুগ্রহ করবেন; আর এটাই মহাসাফল্য!'
নিশ্চয় যারা কুফরী করেছে তাদেরকে উচ্চ কণ্ঠে বলা হবে, 'তোমাদের নিজেদের প্রতি তোমাদের অসন্তোষের চেয়ে আল্লাহর অসন্তোষ ছিল অধিকতর--- যখন তোমাদেরকে ঈমানের পথে ডাকা হয়েছিল কিন্তু তোমরা তার সাথে কুফরী করেছিলে।'
তারা বলবে, 'হে আমাদের রব! আপনি আমাদেরকে দু’বার মৃত্যু দিয়েছেন এবং দু’বার আমাদেরকে জীবন দিয়েছেন। অতঃপর আমরা আমাদের অপরাধ স্বীকার করছি। অতএব (জাহান্নাম থেকে) বের হবার কোন পথ আছে কি [১]?'
____________________
[১] দু’বার মৃত্যু এবং দু’বার জীবন বলতে বুঝানো হয়েছে তোমরা প্রাণহীন ছিলে, তিনি তোমাদের প্রাণ দান করেছেন। এরপর তিনি পুনরায় তোমাদের মৃত্যু দিবেন এবং পরে আবার জীবন দান করবেন। কাফেররা এসব ঘটনার প্রথম তিনটি অস্বীকার করে না। কারণ, ঐগুলো বাস্তবে প্রত্যক্ষ করা যায় এবং সে জন্য অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু তারা শেষোক্ত ঘটনাটি সংঘটিত হওয়া অস্বীকার করে। কারণ, এখনো পর্যন্ত তারা তা প্রত্যক্ষ করেনি এবং শুধু নবী-রসূলগণই এটির খবর দিয়েছেন। কিয়ামতের দিন এ চতুর্থ অবস্থাটিও তারা কার্যত দেখতে পাবে এবং তখন স্বীকার করবে যে, আমাদেরকে যে বিষয়ের খবর দেয়া হয়েছিলো তা প্রকৃতই সত্যে পরিণত হলো। [দেখুন, তাবারী]
‘এটা এজন্যে যে, যখন একমাত্র আল্লাহ্‌কে ডাকা হত তখন তোমরা কুফরী করতে, আর যখন তাঁর সাথে শির্ক করা হত তখন তোমরা তাতে বিশ্বাস করতে।’ সুতরাং যাবতীয় কর্তৃত্ব সমুচ্চ, মহান আল্লাহরই।
তিনিই তোমাদেরকে তাঁর নিদর্শনাবলী দেখান এবং আকাশ হতে তোমাদের জন্য রিযিক নাযিল করেন। আর যে আল্লাহ্-অভিমুখী সেই কেবল উপদেশ গ্ৰহণ করে।
সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ডাক তাঁর আনুগত্যে একনিষ্ঠ হয়ে। যদিও কাফিররা অপছন্দ করে।
তিনি সুউচ্চমর্যাদার অধিকারী, 'আরশের অধিপতি [১], তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার প্রতি ইচ্ছে স্বীয় আদেশ হতে ওহী প্রেরণ করেন [২], যাতে তিনি সতর্ক করেন সম্মেলন দিবস [৩], সম্পর্কে।
____________________
[১] এর আরেক অর্থ ‘তাঁর মহান আরশ সমুচ্চ’। আল্লাহর আরশ সমস্ত পৃথিবী ও আকাশসমূহে পরিব্যাপ্ত এবং সবার ছাদস্বরূপ উচ্চ। সূরা আল-মা'আরেজে বলা হয়েছে
تَعْرُجُ الْمَلَائِكَةُ وَالرُّوحُ إِلَيْهِ فِي يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُ خَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ
এ আয়াতে উল্লেখিত পঞ্চাশ হাজার বছরের পরিমাণ হলে সে দূরত্বের বিশ্লেষণ যা মাটির সপ্তম স্তর থেকে আরশ পর্যন্ত রয়েছে। এ ব্যাখ্যা বহু সংখ্যক পুর্ববর্তী ও পরবর্তী তফসীরবিদদের কাছে অগ্রগণ্য। কোন কোন তফসীরবিদ বলেন, এর অর্থ আল্লাহ তা’আলা মুমিনমুত্তাকীদের মর্যাদা বৃদ্ধিকারী। যেমন, কুরআনের অন্যান্য আয়াত এর সাক্ষ্য বহন করে। এক আয়াতে আছে,
نَرْفَعُ دَرَجَاتٍ مَّن نَّشَاءُ
[সূরা আল-আন’আম: ৮৩] অন্য এক আয়াতে আছে,
هُمْ دَرَجَاتٌ عِندَ اللَّهِ
[সূরা আলে ইমরান: ১৬৩]
[২] রূহ অর্থ অহী ও নবুওয়াত। [কুরতুবী]
[৩] কিয়ামতের একটি নাম يَوْمَ التَّلَاقِ বা সম্মেলন দিবস। [তাবারী।]
যেদিন তারা (লোকসকল) প্রকাশিত হবে সেদিন আল্লাহর কাছে তাদের কিছুই গোপন থাকবে না। আজ কর্তৃত্ব কার? আল্লাহরই, যিনি এক, প্ৰবল প্ৰতাপশালী [১]।
____________________
[১] উল্লেখিত আয়াতসমূহে এ বাক্যটি
يَوْمَ التَّلَاقِ ও يَوْمَ هُمْ بَارِزُوْنَ
এর পরে এসেছে। বলাবাহুল্য, يَوْمَ التَّلَاقِ তথা সাক্ষাত ও সমাবেশের দিন দ্বিতীয় ফুঁকের পরে হবে। এমনিভাবে يَوْمَ هُمْ بَارِزُوْنَ এর ঘটনাও তখন হবে, যখন দ্বিতীয় ফুৎকারের পরে নতুন ভূপৃষ্ঠ সমতল করে দেয়া হবে, যাতে কোন আড়াল থাকবে না। এরপরে لِمَنِ الْمُلْكُ বাক্যটি আনার কারণে বাহ্যত: বোঝা যায় যে, আল্লাহ তা'আলার এ বাণী দ্বিতীয় ফুঁকের মাধ্যমে সবকিছু পুনরুজ্জীবিত হওয়ার পরে বাস্তবায়িত হবে। কিন্তু একটি হাদীসে এসেছে “কিয়ামতের প্রারম্ভে আহবানকারী আহবান করে বলবেন: হে লোক সকল! তোমাদের কিয়ামত এসেছে, তখন জীবিত মৃত সবাই শুনতে পাবে। আর আল্লাহ প্রথম আসমানে নেমে এসে বললেন: আজকের দিনে কার রাজত্ব? একমাত্র পরাক্রম আল্লাহর জন্যই। [মুস্তাদরাকে হাকিম: ২/৪৭৫, ৩৬৩৭] তাছাড়া অন্য বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, আল্লাহ তা'আলা এ উক্তি তখন করবেন, যখন প্রথম ফুঁকের পর সমগ্র সৃষ্টি ধ্বংস হয়ে যাবে। এবং জিবরাইল, মীকাইল, ইস্রাফীল, প্রমূখ নৈকট্যশীল ফেরেশতাগণও মারা যাবে এবং আল্লাহর সত্ত্বা ব্যতীত কোন কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। আল্লাহ বলবেন, আজকের দিন রাজত্ব কার? আল্লাহ নিজেই জওয়াব দেবেন: প্রবল পরাক্রান্ত এক আল্লাহর!” হাদীস থেকে এর সমর্থন পাওয়া যায় ‘কেয়ামতের দিন আল্লাহ তা'আলা সমগ্ৰ পৃথিবী এবং সমগ্র আসমানসমূহকে হাতে গুটিয়ে বলবেন: আমিই বাদশাহ! আমিই পরাক্রমশালী, আমি অহংকারী, দুনিয়ার বাদশারা কোথায়? কোথায় পরাক্রমশালীরা? কোথায় অহংকারকারীরা? [বুখারী: ৭৪১২; মুসলিম: ২৭৮৮]
আজ প্রত্যেককে তার অর্জন অনুসারে প্রতিফল দেয়া হবে; আজ কোন যুলুম নেই [১]। নিশ্চয় আল্লাহ দ্রুত হিসেব গ্রহণকারী।
____________________
[১] অর্থাৎ কোন ধরনের যুলুমই হবে না। প্রতিদানের ক্ষেত্রে যুলুমের কয়েকটি রূপ হতে পারে। এক, প্রতিদানের অধিকারী ব্যক্তিকে প্রতিদান না দেয়া। দুই, সে যতটা প্রতিদান লাভের উপযুক্ত তার চেয়ে কম দেয়া। তিন, শাস্তি যোগ্য না হলেও শাস্তি দেয়া। চার, যে শাস্তির উপযুক্ত তাকে শাস্তি না দেয়া। পাঁচ, যে কম শাস্তির উপযুক্ত তাকে বেশী শাস্তি দেয়া। ছয়, যালেমের নির্দোষ মুক্তি পাওয়া এবং মযলুমের তা চেয়ে দেখতে থাকা। সাত, একজনের অপরাধে অন্যকে শাস্তি দেয়া। আল্লাহ তা'আলার এ বাণীর উদ্দেশ্য হচ্ছে, তাঁর আদালতে এ ধরনের কোন যুলুমই হতে পারবে না। এক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে নগ্ন পা, খৎনাবিহীন এবং নিঃস্ব অবস্থায় হাশর করবেন। তারপর তাদেরকে এমনভাবে ডেকে বলবেন যে, দূরের ও কাছের সবাই তা শুনতে পাবে। তিনি বলবেন, আমিই বিচারক। সুতরাং কোন জান্নাতী জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, অনুরূপ কোন জাহান্নামী জাহান্নামে প্রবেশ করতে পারবে না যতক্ষণ তার কাছে কোন যুলুমের পাওনা অবশিষ্ট থাকবে আর আমি তার বদলা নেব না। এমনকি যদি তা একটি চড়ও হয়। সাহাবাগণ বললেন, আমরা বললাম, কিভাবে তা সম্ভব হবে অথচ আমরা সেখানে নিঃস্ব অবস্থায় হাযির হব। তিনি বললেন, সওয়াব ও গোনাহর মাধ্যমে সেসবের বদলা নেয়া হবে। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ আয়াত তেলাওয়াত করলেন। [মুস্তাদরাকে হাকিম: ২/৪৩৭-৪৩৮]
আর আপনি তাদেরকে সতর্ক করে দিন আসন্ন দিন [১] সম্পর্কে; যখন দুঃখ-কষ্ট সম্বরণরত অবস্থায় তাদের প্ৰাণ কণ্ঠাগত হবে। যালিমদের জন্য কোন অন্তরঙ্গ বন্ধু নেই এবং এমন কোন সুপারিশকারীও নেই যার সুপারিশ গ্রাহ্য হবে।
____________________
[১] আসন্ন দিন বলতে এখানে কিয়ামতের দিবসকে বোঝানো হয়েছে। কুরআন মজীদে মানুষকে বার বার এ উপলব্ধি দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে যে, কিয়ামত তাদের থেকে বেশী দূরে নয় বরং তা অতি সন্নিকটবর্তী হয়ে পড়েছে এবং যে কোন মুহুর্তে সংঘটিত হতে পারে [কুরতুবী] কোথাও বলা হয়েছেঃ
اتٰىٓ امْرُ اللهِ
[আন-নাহল: ১] কোথাও বলা হয়েছে
اقْتَرَبَ لِلنَّاسِ حِسَابُهُمْ
[আল-আম্বিয়া: ১] কোথাও সতর্ক করে দিয়ে বলা হয়েছে
اِقْتَرَبَتِ السَاعِةُ
[আল-কামারঃ ১]। কোথাও বলা হয়েছেঃ
اَزِفَتِ الْاٰزِفَةُ
[আন-নাজম ৫৭]
চোখসমূহের খেয়ানত এবং অন্তরসমূহ যা গোপন রাখে তা তিনি জানেন।
আর আল্লাহ্ ফয়সালা করেন যথাযথ ভাবে এবং আল্লাহর পরিবর্তে তারা যাদেরকে ডাকে তারা কোন কিছুর ফয়সালা করতে পারে না। নিশ্চয় আল্লাহ, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্ৰষ্টা।
এরা কি যমীনে বিচরণ করে না? ফলে দেখত তাদের পূর্বে যারা ছিল তাদের পরিণাম কেমন হয়েছিল। তারা এদের চেয়ে যমীনে শক্তিতে এবং কীর্তিতে ছিল প্রবলতর। তারপর আল্লাহ্ তাদেরকে তাদের অপরাধের জন্য পাকড়াও করলেন এবং আল্লাহর শাস্তি থেকে তাদেরকে রক্ষাকারী কেউ ছিল না।
এটা এ জন্যে যে, তাদের কাছে তাদের রাসূলগণ স্পষ্ট প্রমাণাদিসহ আসত অতঃপর তারা কুফরী করেছিল। ফলে আল্লাহ্ তাদেরকে পাকড়াও করলেন। নিশ্চয় তিনি শক্তিশালী, শাস্তিদানে কঠোর।
আর অবশ্যই আমরা আমাদের নিদর্শন ও স্পষ্ট প্রমাণসহ মূসাকে প্রেরণ করেছিলাম,
ফিরআউন, হামান ও কারূনের কাছে। অতঃপর তারা বলল, 'জাদুকর, চরম মিথ্যাবাদী ৷'
অতঃপর মূসা আমাদের নিকট থেকে সত্য নিয়ে তাদের কাছে উপস্থিত হলে তারা বলল, ‘মূসার সাথে যারা ঈমান এনেছে, তাদের পুত্ৰ সন্তানদেরকে হত্যা কর এবং তাদের নারীদেরকে জীবিত রাখ।' আর কাফিরদের ষড়যন্ত্র কেবল ব্যর্থই হবে।
আর ফির'আউন বলল, 'আমাকে ছেড়ে দাও আমি মূসাকে হত্যা করি এবং সে তার রবকে আহবান করুক। নিশ্চয় আমি আশংকা করি যে, সে তোমাদের দ্বীন পরিবর্তন করে দেবে অথবা সে যমীনে বিপর্যয় ছড়িয়ে দেবে।’
মূসা বললেন, 'আমি আমার রব ও তোমাদের রবের নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি এমন প্ৰত্যেক অহংকারী হতে যে বিচার দিনের উপর ঈমান রাখে না।’
আর ফিরআউন বংশের এক মুমিন ব্যক্তি [১] যে তার ঈমান গোপন রাখছিল সে বলল, ‘তোমরা কি এক ব্যক্তিকে এ জন্য হত্যা করবে যে, সে বলে, 'আমার রব আল্লাহ’, অথচ সে তোমাদের রবের কাছ থেকে সুস্পষ্ট প্রমাণসহ তোমাদের এসেছে [২]? সে মিথ্যাবাদী হলে তার মিথ্যাবাদিতার জন্য সে দায়ী হবে, আর যদি সে সত্যবাদী হয়, সে তোমাদেরকে যে ওয়াদা দিচ্ছে, তার কিছু তোমাদের উপর আপতিত হবে।’ নিশ্চয় আল্লাহ্ তাকে হেদায়াত দেন না, যে সীমালংঘনকারী, মিথ্যাবাদী।
____________________
[১] উপরে স্থানে স্থানে তাওহীদ ও রেসালত অস্বীকারকারীদের প্রতি শাস্তিবাণী উচ্চারণ প্রসঙ্গে কাফেরদের বিরোধিতা ও হঠকারিতা উল্লেখিত হয়েছে। এর ফলে স্বভাবগত কারণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুঃখিত ও চিন্তান্বিত হয়েছে। তার সান্তনার জন্যে মুসা আলাইহিসসালাম ও ফেরাউনের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। এতে ফিরআউন ও ফিরআউন গোত্রের সাথে একজন মহৎ ব্যক্তির দীর্ঘ কথোপকথন উক্ত হয়েছে, যিনি ফিরআউনের গোত্রের একজন হওয়া সত্ত্বেও মুসা আলাইহিসসালাম এর মো'জেযা দেখে ঈমান এনেছিলেন। কিন্তু উপযোগিতার পরিপ্রেক্ষিতে নিজের ঈমান তখন পর্যন্ত গোপন রেখেছিলেন। কথোপকথনের সময় তার ঈমানও জনসমক্ষে প্রকাশিত হয়ে পড়ে। মোকাতেল, সুদ্দী, হাসান বসরী প্রমুখ তফসীরবিদ বলেন, উনি ফেরাউনের চাচাত ভাই ছিলেন। কিবতী হত্যার ঘটনায় যখন ফের'আউনের দরবারে মূসা আলাইহিস্‌ সালামকে পাল্টা হত্যা করার পরামর্শ চলছিল, তখন তিনি শহরের এক প্রান্ত থেকে দৌড়ে এসে মূসা আলাইহিস সালাম কে অবহিত করেছিলেন এবং মিসরের বাইরে চলে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। সূরা আল- কাসাসে এ ঘটনা বর্ণনা করে বলা হয়েছে:
وَجَاءَ رَجُلٌ مِّنْ أَقْصَى الْمَدِينَةِ يَسْعَىٰ
শহরের প্রান্ত থেকে একজন লোক দৌড়ে আসল”। [সূরা আল- কাসাস; আয়াত-২০][দেখুন, কুরতবী]
[২] অনুরূপ অবস্থা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপরও আপতিত হয়েছিল। উরওয়া ইবনে যুবাইর বলেন, আমি আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবন আসকে বললাম, মুশরিকরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে সবচেয়ে কঠোর যে ব্যবহার করেছিল তা সম্পর্কে আমাকে জানান। তিনি বললেন, একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কা'বার সামনে সালাত আদায় করছিলেন, এমতাবস্থায় উকবা ইবন আবি মু'আইত এসে রাসূলের ঘাড় ধরলো এবং তার কাপড় দিয়ে রাসূলের গলা পেঁচিয়ে ধরলো। ফলে তার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম হলো, তখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু দৌড়ে আসলেন এবং তার কাঁধ ধরে ফেললেন ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে প্রতিরোধ করে বললেন, “তোমরা কি এক ব্যক্তিকে এ জন্য হত্যা করবে যে, সে বলে, “আমার রব আল্লাহ’, অথচ সে তোমাদের রবের কাছ থেকে সুস্পষ্ট প্রমাণসহ তোমাদের কাছে এসেছে।” [বুখারী: ৮৪১৫]
'হে আমার সম্প্রদায়! আজ তোমাদেরই রাজত্ব, যমীনে তোমরাই প্রভাবশালী; কিন্তু আমাদের উপর আল্লাহর শাস্তি এসে পড়লে কে আমাদেরকে সাহায্য করবে?' ফিরআউন বলল, 'আমি যা সঠিক মনে করি, তা তোমাদেরকে দেখাই। আর আমি তোমাদেরকে শুধু সঠিক পথই দেখিয়ে থাকি।'
যে ঈমান এনেছিল সে আরও বলল, 'হে আমার সম্প্রদায়! নিশ্চয় আমি তোমাদের জন্য পূর্ববর্তী দলসমূহের দিনের অনুরূপ আশংকা করি---
‘যেমন ঘটেছিল নূহ, ‘আদ, সামূদ এবং তাদের পরবর্তীদের ব্যাপারে। আর আল্লাহ্ বান্দাদের প্রতি কোন যুলুম করতে চান না।
আর ‘হে আমার সম্পপ্ৰদায়! আমি তোমাদের জন্য আশংকা করি ভয়ার্ত আহ্বান দিনের,
'যেদিন তোমরা পিছনে ফিরে পালাতে চাইবে, আল্লাহর শাস্তি হতে রক্ষা করার কেউ থাকবে না। আর আল্লাহ্ যাকে বিভ্রান্ত করেন, তার জন্য কোন হেদায়াতকারী নেই।'
আর অবশ্যই পূর্বে তোমাদের কাছে ইউসুফ এসেছিলেন স্পষ্ট প্রমাণাদিসহ; অতঃপর তিনি তোমাদের কাছে যা নিয়ে এসেছিলেন তোমরা তাতে সর্বদা সন্দেহ করেছিলে। পরিশেষে যখন তার মৃত্যু হল তখন তোমরা বলেছিলে, ‘তার পরে আল্লাহ্‌ আর কোন রাসূল প্রেরণ করবেন না।' এভাবেই আল্লাহ্ যে সীমালংঘনকারী, সংশয়বাদী তাকে বিভ্ৰান্ত করেন ---
যারা নিজেদের কাছে (তাদের দাবীর সমর্থনে) কোন দলীল-প্রমাণ না আসলেও আল্লাহর নিদর্শনাবলী সম্পর্কে বিতণ্ডায় লিপ্ত হয়। তাদের এ কাজ আল্লাহ ও মুমিনদের দৃষ্টিতে খুবই ঘূণার যোগ্য। এভাবে আল্লাহ্ মোহর করে দেন প্রত্যেক অহংকারী, স্বৈরাচারী ব্যক্তির হৃদয়ে [১]।
____________________
[১] অর্থাৎ বিনা কারণে কারো মনে মোহর লাগিয়ে দেয়া হয় না। যার মধ্যে অহংকার ও স্বেচ্ছাচারিতা সৃষ্টি হয় লা'নতের এ মোহর কেবল তার মনের ওপরেই লাগানো হয়। “তাকাববুর’ অর্থ ব্যক্তির মিথ্যা অহংকার যার কারণে ন্যায় ও সত্যের সামনে মাথা নত করাকে সে তার মর্যাদার চেয়ে নীচু কাজ বলে মনে করে। স্বেচ্ছাচারিতা অর্থ আল্লাহর সৃষ্টির ওপর জুলুম করা। এ জুলুমের অবাধ লাইসেন্স লাভের জন্য ব্যক্তি আল্লাহর শরীয়াতের বাধ্য-বাধকতা মেনে নেয়া থেকে দূরে থাকে। ফিরআউন ও হামানের অন্তর যেমন মুসা আলাইহিস সালাম ও মুমিন ব্যক্তির উপদেশে প্রভাবান্বিত হয়নি, এমনিভাবে আল্লাহ তা'আলা প্রত্যেক উদ্ধত, স্বৈরাচারীর অন্তরে মোহর এটে দেন। ফলে তাদের অন্তরে ঈমানের নূর প্রবেশ করে না এবং সে ভাল-মন্দের পার্থক্য করতে পারবে না। আয়াতে مُتَكَبر ও جَبَّار শব্দদ্বয়কে قلب এর বিশেষণ করা হয়েছে। কারণ, সকল নৈতিকতা ও ক্রিয়াকর্মের উৎস হচ্ছে অন্তর। অন্তর থেকেই ভাল-মন্দ কর্ম জন্ম লাভ করে। এ কারণেই হাদীসে বলা হয়েছে, মানুষের দেহে একটি মাংসপিন্ড (অর্থাৎ অন্তরে) এমন আছে, যা ঠিক থাকলে সমগ্ৰ দেহ ঠিক থাকে এবং যা নষ্ট হলে সমগ্ৰ দেহ নষ্ট হয়ে যায়। [বুখারী: ৫২, মুসলিম: ১৫৯৯]
ফিরআউন আরও বলল, 'হে হামান! আমার জন্য তুমি নির্মাণ কর এ সুউচ্চ প্রাসাদ যাতে আমি অবলম্বন পাই ---
‘আসমানে আরোহণের অবলম্বন, যেন দেখতে পাই মূসার ইলাহকে; আর নিশ্চয় আমি তাকে মিথ্যাবাদী মনে করি।' আর এভাবে ফির'আউনের কাছে শোভনীয় করা হয়েছিল তার মন্দ কাজকে এবং তাকে নিবৃত্ত করা হয়েছিল সরল পথ থেকে এবং ফির'আউনের ষড়যন্ত্র কেবল ব্যর্থই ছিল।
আর যে ঈমান এনেছিল সে আরও বলল, 'হে আমার সম্পপ্ৰদায়! তোমরা আমার অনুসরণ কর, আমি তোমাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করব।
‘হে আমার সম্প্রদায়! এ দুনিয়ার জীবন কেবল অস্থায়ী ভোগের বস্তু, আর নিশ্চয় আখিরাত, তা হচ্ছে স্থায়ী আবাস।
‘কেউ মন্দ কাজ করলে সে শুধু তার কাজের অনুরূপ শাস্তিই প্রাপ্ত হবে। আর যে পুরুষ কিংবা নারী মুমিন হয়ে সৎকাজ করবে তবে তারা প্ৰবেশ করবে জান্নাতে, সেখানে তাদেরকে দেয়া হবে অগণিত রিযিক।
'আর হে আমার সম্পপ্রদায়! আমার কি হলো যে, আমি তোমাদেরকে ডাকছি মুক্তির দিকে, আর তোমরা আমাকে ডাকছ আগুনের দিকে!
'তোমরা আমাকে ডাকছ যাতে আমি আল্লাহর সাথে কুফরী করি এবং তাঁর সাথে শরীক করি, যে ব্যাপারে আমার কোন জ্ঞান নেই; আর আমি তোমাদেরকে ডাকছি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীলের দিকে।
‘নিঃসন্দেহ যে, তোমরা আমাকে যার দিকে ডাকছ, সে দুনিয়া ও আখিরাতে কোথাও ডাকের যোগ্য নয়। আর আমাদের ফিরে যাওয়া তো আল্লাহর দিকে এবং নিশ্চয় সীমালংঘনকারীরা আগুনের অধিবাসী।
'সুতরাং তোমরা অচিরেই স্মরণ করবে যা আমি তোমাদেরকে বলছি এবং আমি আমার ব্যাপার আল্লাহর নিকট সমর্পণ করছি; নিশ্চয় আল্লাহ তার বান্দাদের ব্যাপারে সর্বদ্ৰষ্টা।'
অতঃপর আল্লাহ্ তাকে তাদের ষড়যন্ত্রের অনিষ্ট হতে রক্ষা করলেন এবং ফিরআউন গোষ্ঠীকে ঘিরে ফেলল কঠিন শাস্তি;
আগুন, তাদেরকে তাতে উপস্থিত করা হয় সকাল ও সন্ধ্যায় এবং যেদিন কিয়ামত ঘটবে সেদিন বলা হবে, 'ফিরআউন গোষ্ঠীকে নিক্ষেপ কর কঠোর শাস্তিতে [১]।'
____________________
[১] বহু সংখ্যক হাদীসে কবরের আযাবের যে উল্লেখ আছে এ আয়াত তার সুস্পষ্ট প্রমাণ। আল্লাহ তা’আলা এখানে সুস্পষ্ট ভাষায় আযাবের দু'টি পর্যায়ের উল্লেখ করছেন। একটি হচ্ছে কম মাত্রার আযাব যা কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার পূর্বে ফিরআউনের অনুসারীদের দেয়া হচ্ছে। তাদেরকে সকাল ও সন্ধ্যায় জাহান্নামের আগুনের সামনে পেশ করা হয়। এরপর কিয়ামত আসলে তাদের জন্য নির্ধারিত বড় এবং সত্যিকার আযাব দেয়া হবে। ডুবে মরার সময় থেকে আজ পর্যন্ত তাদেরকে সে আযাবের দৃশ্য দেখানো হচ্ছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত দেখানো হবে। এ ব্যাপারটি শুধু ফিরআউন ও ফিরআউনের অনুসারীদের জন্য নির্দিষ্ট নয়। অপরাধীদের জন্য যে জঘন্য পরিণাম অপেক্ষা করছে, মৃত্যুর মুহূর্ত থেকে কিয়ামত পর্যন্ত তারা সবাই সে দৃশ্য দেখতে পায় আর সমস্ত সৎকর্মশীল লোকের জন্য আল্লাহ তা'আলা যে শুভ পরিণাম প্ৰস্তুত করে রেখেছেন তার সুন্দর দৃশ্যও তাদেরকে দেখানো হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের মধ্য থেকে যে ব্যক্তিই মারা যায় তাকেই সকাল ও সন্ধ্যায় তার শেষ বাসস্থান দেখানো হতে থাকে। জান্নাতি ও দোযখী উভয়ের ক্ষেত্রেই এটি হতে থাকে। তাকে বলা হয় কিয়ামতের দিন যখন আল্লাহ তোমাকে পুনরায় জীবিত করে তাঁর সান্নিধ্যে ডেকে নেবেন, তখন তোমাকে আল্লাহ যে জায়গা দান করবেন, এটা সেই জায়গা।” [মুসনাদ: ২/১১৩, বুখারী: ১৩৭৯, মুসলিম: ২৮৬৬]
আর যখন তারা জাহান্নামে পরস্পর বিতর্কে লিপ্ত হবে, তখন দুর্বলেরা যারা অহংকার করেছিল তাদেরকে বলবে, 'আমরা তো তোমাদের অনুসরণ করেছিলাম সুতরাং তোমরা কি আমাদের থেকে জাহান্নামের আগুনের কিছু অংশ গ্ৰহণ করবে?'
অহংকারীরা বলবে, 'নিশ্চয় আমরা সকলেই এতে রয়েছি, নিশ্চয় আল্লাহ্ বান্দাদের বিচার করে ফেলেছেন।'
আর যারা আগুনের অধিবাসী হবে তারা জাহান্নামের প্রহরীদেরকে বলবে, ‘তোমাদের রবকে ডাক, তিনি যেন আমাদের থেকে শাস্তি লাঘব করেন এক দিনের জন্য।'
তারা বলবে, 'তোমাদের কাছে কি স্পষ্ট প্রমাণাদিসহ তোমাদের রাসূলগণ আসেননি?' জাহান্নামীরা বলবে, 'হ্যাঁ, অবশ্যই।' প্রহরীরা বলবে, 'সুতরাং তোমরাই ডাক; আর কাফিরদের ডাক শুধু ব্যর্থই হয়।'
নিশ্চয় আমরা আমাদের রাসূলদেরকে এবং যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে সাহায্য করব দুনিয়ার জীবনে [১], আর যেদিন সাক্ষীগণ দাঁড়াবে [২]।
____________________
[১] এ আয়াতে আল্লাহ তা'আলার ওয়াদা রয়েছে যে, তিনি তাঁর রাসুল ও মুমিনগণকে সাহায্য করেন দুনিয়ার জীবনে এবং আখেরাতেও। বলাবাহুল্য, এ সাহায্য কেবল শক্ৰদের বিরুদ্ধেই সীমিত। অধিকাংশ নবী-রাসুলদের ক্ষেত্রে এর বাস্তবতা বর্ণনাসাপেক্ষ নয়। কিন্তু কোন কোন নবী-রাসূল যেমন, ইয়াহইয়া, যাকারিয়্যাকে শত্রুরা শহীদ করেছে এবং কতককে দেশান্তরিত করেছে। যেমন, ইবরাহীম ও খাতামুল আম্বিয়া মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহিমা ওয়া সাল্লাম, তাদের ক্ষেত্রে আয়াতে বর্ণিত সাহায্যের ব্যাপারে সন্দেহ হতে পারে। ইবন কাসীর এর দুটি জওয়াব দেন। এক. এখানে রাসূল বলে সমস্ত রাসূলগণকে বুঝানো হয়নি বরং কোন কোন রাসূল বোঝানো হয়েছে। দুই. এ আয়াতে বর্ণিত সাহায্যের অর্থ শত্রুর কাছ থেকে হোক, কিংবা তাদের ওফাতের পরে হোক। এর অর্থ কোনরূপ ব্যতিক্রম ছাড়াই সমস্ত নবী-রাসূল ও মুমিনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। নবী-রাসুলগণের হত্যাকারীদের আযাব ও দুর্দশার বর্ণনা দ্বারা ইতিহাসের পাতা পরিপূর্ণ। ইয়াহইয়া, যাকারিয়্যা আলাইহিমাস সালাম এর হত্যাকারীদের উপর বহিঃশত্রু চাপিয়ে দেয়া হয়েছে, যারা তাদেরকে অপমানিত ও লাঞ্ছিত করে হত্যা করেছে। নমরূদকে আল্লাহ তা'আলা সামান্যতম প্রাণী দিয়ে পরাজিত করেছেন। এ উম্মতের প্রাথমিক যুগের কাফেরদেরকে বদর যুদ্ধের প্রাক্কালে আল্লাহ তা'আলা মুসলিমদের হাতেই পরাভূত করেছেন। তাদের বড় বড় সদরার নিহত হয়েছে, কিছু বন্দী হয়েছে এবং অবশিষ্টরা মক্কা বিজয়ের দিন গ্রেফতার হয়েছে। অবশ্য রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে মুক্ত করে দিয়েছেন। তার দ্বীনই জগতের সমস্ত দ্বীনের উপর প্রাধান্য বিস্তার করেছে এবং তার জীবদ্দশায়ই আরব উপদ্বীপের বিরাটাংশে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। [দেখুন, ইবন কাসীর]
[২] যেদিন সাক্ষীরা দণ্ডায়মান হবে। অর্থাৎ কেয়ামতের দিন। সেখানে নবী - রাসূল ও মুমিনগণের জন্যে আল্লাহর সাহায্য বিশেষভাবে প্রকাশ লাভ করবে। [ তাবারী।]
যেদিন যালিমদের 'ওজার-আপত্তি তাদের কোন কাজে আসবে না। আর তাদের জন্য রয়েছে লা'নত এবং তাদের জন্য রয়েছে নিকৃষ্ট আবাস।
আর অবশ্যই আমরা মূসাকে দান করেছিলাম হেদায়াত এবং বনী ইসরাইলের উত্তরাধিকারী করেছিলাম কিতাবের,
পথনির্দেশ ও উপদেশস্বরূপ বোধশক্তি সম্পন্ন লোকদের জন্য।
অতএব আপনি ধৈর্য ধারণ করুন; নিশ্চয় আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য। আর আপনি আপনার ত্রুটির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন এবং আপনার রবের সপ্রশংস পবিত্রতা-মহিমা ঘোষনা করুন সন্ধ্যা ও সকালে।
নিশ্চয় যারা নিজেদের কাছে কোন দলীল না থাকলেও আল্লাহর নিদর্শনাবলী সম্পর্কে বিতর্কে লিপ্ত হয়, তাদের অন্তরে আছে শুধু অহংকার, তারা এ ব্যাপারে সফলকাম হবে না। অতএব আপনি আল্লাহর নিকট আশ্রয় চান; নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্ৰষ্টা।
মানুষ সৃষ্টি অপেক্ষা আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি অবশ্যই বড় বিষয়, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না।
আর সমান হয় না অন্ধ ও চক্ষুম্মান, অনুরূপ যারা ঈমান আনে এবং সৎকাজ করে তারা আর মন্দকর্মকারী। তোমরা অল্পই উপদেশ গ্রহণ করে থাক।
নিশ্চয় কিয়ামত অবশ্যম্ভাবী, এতে কোন সন্দেহ নেই; কিন্তু অধিকাংশ লোক ঈমান আনে না।
আর তোমাদের রব বলেছেন, 'তোমরা আমাকে ডাক [১], আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। নিশ্চয় যারা অহংকারবশে আমার 'ইবাদাত থেকে বিমুখ থাকে, তারা অচিরেই জাহান্নামে প্রবেশ করবে লাঞ্ছিত হয়ে [২]।'
____________________
[১] ‘দোআ’র শাব্দিক অর্থ ডাকা, অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিশেষ কোন প্রয়োজনে ডাকার অর্থে ব্যবহৃত হয়। কখনও যিকরকেও দোআ বলা হয়। যেমন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আরাফাতে আমার দো'আ ও পূর্ববর্তী সকল নবী-রাসূলগণের দোআ এই কলেমা:
لٰا إِلَهَ إِلَّااللّٰهُ وَحْلَهُ لٰا شَرِيْكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمدُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
এতে যিকরকে দোআ বলা হয়েছে। কারণ, দো'আ দু' প্রকারঃ ১. প্রার্থনা বা কিছু পেতে দোআ করা ও ইবাদাতের মাধ্যমে দো'আ করা। চাওয়া বা প্রার্থনার দো'আ হল - আল্লাহর কাছে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ চাওয়া। এতে চাওয়া আছে, যাচঞা আছে। পক্ষান্তরে ইবাদাতের দো’আর মধ্যে চাওয়া নেই। শুধু নৈকট্য লাভের জন্য যা যা করা হয় তাই এ প্রকারের ইবাদত। নৈকট্য লাভের সকল প্রকাশ্য-অপ্ৰকাশ্য কাজ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে; কেননা যে আল্লাহর ইবাদাত করে, সে স্বীয় কথা ও অবস্থার ভাষায় তার রবের কাছে উক্ত ইবাদাত কবুল করার এবং এর উপর সাওয়াব দেয়ার আবেদন করে থাকে। পবিত্র কুরআনে দো’আর যত নির্দেশ এসেছে, আর আল্লাহ ছাড়া অন্যের কাছে দো'আ করা থেকে যত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে এবং দো'আকারীদের যত প্রশংসা করা হয়েছে, সে সবই প্রার্থনার দো'আ ও ইবাদাতের দো’আকে শামিল করে থাকে। যেমন, আল্লাহ বলেন,
فَادْعُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ
“সুতরাং আল্লাহকে ডাক তাঁর আনুগত্যে একনিষ্ঠ হয়ে”। [সূরা গাফিরঃ ১৪] আরও বলেন,
وَأَنَّ الْمَسَاجِدَ لِلَّهِ فَلَا تَدْعُوا مَعَ اللَّهِ أَحَدًا
“আর মসজিদসমূহ আল্লাহরই জন্য। সুতরাং আল্লাহর সাথে তোমরা অন্য কাউকে ডেকো না”। [সূরা আল-জ্বিনঃ ১৮] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার এক বাণীতে বলেছেন, ‘দো’আই ইবাদত। তারপর তিনি এ আয়াত পাঠ করলেন। [আবু দাউদ: ১৪৭৯, তিরমিযি: ২৯৬৯, ইবন মাজাহ: ৩৮২৮] অর্থাৎ প্রত্যেক দো'আই ইবাদত এবং প্রত্যেক ইবাদতই দো'আ। কারণ এই যে, ইবাদত বলা হয় কারও সামনে চুড়ান্ত দীনতা অবলম্বন করাকে। বলাবাহুল্য, নিজেকে কারও মুখাপেক্ষী মনে করে তার সামনে সওয়ালের হস্ত প্রসারিত করা বড় দীনতা, যা ইবাদতের অর্থ। এমনিভাবে প্রত্যেক ইবাদতের সারমর্মও আল্লাহর কাছে মাগফেরাত ও জান্নাত তলব করা এবং দুনিয়া ও আখেরাতের নিরাপত্তা প্রার্থনা করা। আলোচ্য আয়াতেও “দো’আ” ও “ইবাদত” শব্দ দু'টিকে সমার্থক শব্দ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। কেননা, প্রথম বাক্যাংশে যে জিনিসকে দোআ শব্দ দ্বারা প্ৰকাশ করা হয়েছে দ্বিতীয় বাক্যাংশে সে জিনিসকেই ইবাদাত শব্দ দ্বারা প্ৰকাশ করা হয়েছে। এ দ্বারা একথা পরিষ্কার হয়ে গেল যে, দো’আই ইবাদাত আর ইবাদতই দো'আ। ঠিক এ বিষয়টিকে আমরা পবিত্র কুরআনের অন্য আয়াতে লক্ষ্য করতে পারি। সেখানে আল্লাহ বলেনঃ
وَمَنْ أَضَلُّ مِمَّن يَدْعُو مِن دُونِ اللَّهِ مَن لَّا يَسْتَجِيبُ لَهُ إِلَىٰ يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَهُمْ عَن دُعَائِهِمْ غَافِلُونَ *وَإِذَا حُشِرَ النَّاسُ كَانُوا لَهُمْ أَعْدَاءً وَكَانُوا بِعِبَادَتِهِمْ كَافِرِينَ
“সে ব্যক্তি অপেক্ষা অধিক বিভ্রান্ত কে, যে আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুকে আহবান করে যা ক্বিয়ামত দিবস পর্যন্তও তার আহবানে সাড়া দিবে না? আর অবস্থা তো এরকম যে, এসব কিছু তাদের আহবান সম্পর্কে অবহিতও নয়। যখন (কিয়ামতের দিন) মানুষদেরকে একত্রিত করা হবে, তখন সে সকল কিছু হবে তাদের শত্রু এবং সেগুলো তাদের ইবাদাত অস্বীকার করবে”। [সূরা আল-আহকাফঃ ৫-৬]
[২] উম্মতে মুহাম্মদীয়ার বিশেষ সম্মানের কারণে এই আয়াতে তাদেরকে দো'আ করার আদেশ করা হয়েছে এবং তা কবুল করারও ওয়াদা করা হয়েছে। আর যারা দো'আ করে না, তাদের জন্যে শাস্তিবাণী উচ্চারণ করা হয়েছে। আলোচ্য আয়াতে দো'আ অর্থ যদি ইবাদতের দো'আ বোঝানো হয় তবে দো'আ বর্জনকারী অবশ্যই গুনাহগার এমনকি কাফেরও হবে। আর সে হিসেবেই ইবাদত বর্জনকারীকে জাহান্নামের শাস্তিবাণী শোনানো হয়েছে। আর যদি দো'আ' বলে “চাওয়া’ বা “যাচঞা করা” উদ্দেশ্য হয় তখন দোআ না করলে জাহান্নামের শাস্তিবাণী ঐ সময়ই শুধু হবে যখন সে অহংকারবশত: তা বর্জন করে। কেননা, অহংকারবশত: দো'আ বর্জন করা কুফরের লক্ষণ, তাই সে জাহান্নামের যোগ্য হয়ে যায়। নতুবা সাধারণ দো'আ ফরয বা ওয়াজিব নয়। দোআ না করলে গোনাহ হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আল্লাহর কাছে দো'আ অপেক্ষা অধিক সম্মানিত কোন বিষয় নেই। তিরমিযি: ৩৩৭০] অন্য এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে তার প্রয়োজন প্রার্থনা করে না, আল্লাহ তার প্রতি রুষ্ট হন। [তিরমিযি:৩৩৭৩]
উপরোক্ত আয়াতে ওয়াদা রয়েছে যে বান্দা আল্লাহর কাছে যে দো'আ করে, তা কবুল হয়। কিন্তু মানুষ মাঝে মাঝে দো'আ কবুল না হওয়াও প্রত্যক্ষ করে। এর জওয়াব দুটি। এক. দো'আ কবুল হওয়ার উপায় তিনটি। তন্মধ্যে কোন না কোন উপায়ে দো'আ কবুল হয়। (এক) যা চাওয়া হয়, তাই পাওয়া (দুই) প্রার্থিত বিষয়ের পরিবর্তে আখেরাতের কোন সওয়াব ও পুরস্কার দান করা এবং (তিন) প্রার্থিত বিষয় না পাওয়া। কিন্তু কোন সম্ভাব্য আপদ-বিপদ সরে যাওয়া। সুতরাং এর যে কোন একটি হলেই দোআ কবুল হয়েছে ধরে নিতে হবে। দুই. নির্ভরযোগ্য হাদীসমূহে কোন বিষয়কে দো'আ কবুলের পথে বাধা বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এসব বিষয় থেকে বেঁচে থাকা জরুরী। এক. হারাম খাবার ও হারাম পরিধেয় পরিধান; হাদীসে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, কোন কোন লোক খুব সফর করে এবং আকাশের দিকে হাত তুলে ইয়া রব, ইয়া রব, বলে দো'আ করে; কিন্তু তাদের পানাহার ও পোশাক-পরিচ্ছেদ হারাম পস্থায় অর্জিত। এমতাবস্থায় তাদের দো'আ কিরূপে কবুল হবে? [মুসলিম: ১০১৫] দুই. অসাবধান বেপরোয়া ও অন্যমনস্কভাবে দো'আর বাক্যাবলী উচ্চারণ করলে তাও কবুল হয় না বলেও হাদীসে বর্ণিত আছে। [তিরমিযি: ৩৪৭৯] তিন. অন্যায় কোন দো'আ যেন না হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, মুসলিম আল্লাহর কাছে যে দো”আই করে, আল্লাহ তা দান করেন, যদি তা কোন গোনাহ অথবা সম্পর্কচ্ছেদের দোআ না হয়। [মুসলিম: ২৭৩৫]
আল্লাহ, যিনি তোমাদের জন্য তৈরী করেছেন রাতকে; যাতে তোমরা তাতে বিশ্রাম করতে পার এবং আলোকোজ্জ্বল করেছেন দিনকে। নিশ্চয় আল্লাহ্ মানুষের প্রতি অনুগ্রহশীল, কিন্তু অধিকাংশ মানুষই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না।
তিনিই আল্লাহ্, তোমাদের রব, সব কিছুর স্রষ্টা; তিনি ছাড়া কোন সত্য ইলাহ্ নেই; কাজেই তোমাদেরকে কোথায় ফিরিয়ে নেয়া হচ্ছে?
এভাবেই ফিরিয়ে নেয়া হয় তাদেরকে যারা আল্লাহর নিদর্শনাবলীকে অস্বীকার করে।
আল্লাহ্, যিনি তোমাদের জন্য যমীনকে স্থিতিশীল করেছেন এবং আসমানকে করেছেন ছাদ এবং তিনি তোমাদের আকৃতি দিয়েছেন অতঃপর তোমাদের আকৃতিকে করেছেন সুন্দর এবং তোমাদেরকে রিযিক দান করেছেন পবিত্ৰ বস্তু থেকে। তিনিই আল্লাহ্ তোমাদের রব। সুতরাং সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহ্ কত বরকতময়!
তিনি চিরঞ্জীব, তিনি ছাড়া কোন সত্য ইলাহ্ নেই। কাজেই তোমরা তাঁকেই ডাক, তাঁর আনুগত্যে একনিষ্ঠ হয়ে। সকল প্রশংসা সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহরই।
বলুন, 'তোমরা আল্লাহ্ ছাড়া যাদেরকে ডাক, তাদের ইবাদত করতে আমাকে নিষেধ করা হয়েছে, যখন আমার রবের কাছ থেকে আমার কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণাদি এসেছে। আর আমি আদেশপ্রাপ্ত হয়েছি সৃষ্টিকুলের রবের কাছে আত্মসমৰ্পণ করতে।
'তিনিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে, পরে শুক্রবিন্দু থেকে, তারপর আলাকাহ থেকে, তারপর তিনি তোমাদেরকে বের করেছেন শিশুরূপে, তারপর যেন তোমরা উপনীত হও তোমাদের যৌবনে, তারপর যেন তোমরা হয়ে যাও বৃদ্ধ। আর তোমাদের মধ্যে কারো মৃত্যু ঘটে এর আগেই এবং যাতে তোমরা নির্ধারিত সময়ে পৌঁছে যাও। আর যেন তোমরা বুঝতে পার।
'তিনিই জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান এবং যখন তিনি কিছু করা স্থির করেন তখন তিনি তার জন্য বলেন 'হও', ফলে তা হয়ে যায়।’
আপনি কি লক্ষ্য করেন না তাদেরকে যারা আল্লাহর নিদর্শন সম্পর্কে বিতর্ক করে? তাদেরকে কোথায় ফিরানো হচ্ছে?
যারা মিথ্যারোপ করে কিতাবে এবং যাসহ আমাদের রাসূলগণকে আমরা পাঠিয়েছি তাতে; অতএব, তারা শীঘ্রই জানতে পারবে---
যখন তাদের গলায় বেড়ী ও শৃংখল থাকবে, তাদেরকে টেনে নিয়ে যাওয়া হবে
ফুটন্ত পানিতে, তারপর তাদেরকে পোড়ানো হবে আগুনে [১]।
____________________
[১] এ আয়াত থেকে জানা যায় যে, জাহান্নামীদেরকে প্রথমে حميم অর্থাৎ ফুটন্ত পানিতে ও পরে جحيم অর্থাৎ জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। এ থেকে আরও জানা যায় যে, حميم জাহান্নামের বাইরের কোন স্থান, যার ফুটন্ত পানি পান করানোর জন্যে জাহান্নামীদেরকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হবে। অর্থাৎ তারা যখন তীব্র পিপাসায় বাধ্য হয়ে পানি চাইবে তখন দোযখের কর্মচারীরা তাদেরকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে টেনে হেঁচড়ে এমন জায়গায় নিয়ে যাবে, যা থেকে টগবগে গরম পানি বেরিয়ে আসছে। অতঃপর তাদের সে পানি পান করা শেষ হলে আবার তারা তাদেরকে টেনে হেঁচড়ে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে এবং জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করবে। সূরা আস-সাফ্‌ফাতের ৬৭-৬৮ নং আয়াত থেকেও তাই জানা যায়। কোন কোন আয়াত থেকে জানা যায় যে, حميم ও جحيم একই স্থান এবং جحيم এর মধ্যেই حميم অবস্থিত। আয়াতটি এইঃ
هَٰذِهِ جَهَنَّمُ الَّتِي يُكَذِّبُ بِهَا الْمُجْرِمُونَ * يَطُوفُونَ بَيْنَهَا وَبَيْنَ حَمِيمٍ آنٍ
[সুরা আর-রহমানঃ ৪৩-৪৪]
পরে তাদেরকে বলা হবে, 'কোথায় তারা যাদেরকে তোমরা শরীক করতে,
আল্লাহ ছাড়া?' তারা বলবে, ‘তারা তো আমাদের কাছ থেকে উধাও হয়েছে [১]; বরং আগে আমরা কিছুকে ডাকিনি।’ এভাবে আল্লাহ কাফিরদেরকে বিভ্ৰান্ত করেন।
____________________
[১] অর্থাৎ জাহান্নামে পৌঁছে মুশরিকরা বলবে, আমাদের উপাস্য প্রতিমা ও শয়তান আজ উধাও হয়ে গেছে। অর্থাৎ আমাদের দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না, যদিও তারা জাহান্নামের কোন কোণে পড়ে আছে। তারাও যে জাহান্নামেই থাকবে, এ সম্পর্কে অন্য এক আয়াতে বলা হয়েছে
إِنَّكُمْ وَمَا تَعْبُدُونَ مِن دُونِ اللَّهِ حَصَبُ جَهَنَّمَ أَنتُمْ لَهَا وَارِدُونَ
[সূরা আল-আম্বিয়া: ৯৮]
এটা এ জন্যে যে, তোমরা যমীনে অযথা উল্লাস করতে [১] এবং এজন্যে যে, তোমরা অহংকার করতে।
____________________
[১] فرح এর অর্থ আনন্দিত ও উল্লাসিত হওয়া এবং مرح এর অর্থ দম্ভ করা, অর্থ-সম্পদের অহংকারী হয়ে অপরের অধিকার খর্ব করা। مرح সর্বাবস্থায় নিন্দনীয় ও হারাম। পক্ষান্তরে فرح অর্থাৎ আনন্দ যদি ধন-সম্পদের নেশায় আল্লাহকে ভুলে গোনাহের কাজ দ্বারা হয়, তবে হারাম ও না জায়েয। আলোচ্য আয়াতে এই আনন্দই বোঝানো হয়েছে। কারূনের কাহিনীতেও فرح এ অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে। বলা হয়েছে,
لَا تَفْرَحُ اِنَّ اللهَ لَاحِيُبُّ الْفَرِحِيْنَ
[সূরা আল-কাসাস:৭৬] অর্থাৎ আনন্দ- উল্লাস করো না। নিশ্চয় আল্লাহ আনন্দ উল্লাসকারীদেরকে পছন্দ করেন না। আনন্দ উল্লাসের আরেক স্তর হল পার্থিব নেয়ামত ও সুখকে আল্লাহ তা'আলার অনুগ্রহ ও দান মনে করে তজ্জন্যে আনন্দ প্রকাশ করা। এটা জায়েয, মোস্তাহাব বরং আদিষ্ট কর্তব্য। এ আনন্দ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,
قُلْ بِفَضْلِ اللَّهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَٰلِكَ فَلْيَفْرَحُوا
অর্থাৎ বলুন, আল্লাহর রহমত ও অনুগ্রহে (তা হয়েছে), সুতরাং এ কারণে তাদের আনন্দিত হওয়া উচিত। [সূরা ইউনুস: ৫৮]
তোমরা জাহান্নামের বিভিন্ন দরজা দিয়ে প্রবেশ কর, তাতে স্থায়ীভাবে অবস্থানের জন্য, অতএব কতই না নিকৃষ্ট অহংকারীদের আবাসস্থল!
সুতরাং আপনি ধৈর্য ধারণ করুন। নিশ্চয় আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য। অতঃপর আমরা তাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি প্ৰদান করি তার কিছু যদি আপনাকে দেখিয়ে দেই অথবা আপনার মৃত্যু ঘটাই---তবে তাদের ফিরে আসা তো আমাদেরই কাছে।
আর অবশ্যই আমরা আপনার পূর্বে অনেক রাসূল পাঠিয়েছি। আমরা তাদের কারো কারো কাহিনী আপনার কাছে বিবৃত করেছি এবং কারো কারো কাহিনী আপনার কাছে বিবৃত করিনি। আর আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কোন নিদর্শন নিয়ে আসা কোন রাসূলের কাজ নয়। অতঃপর যখন আল্লাহর আদেশ আসবে তখন ন্যায়সংগতভাবে ফয়সালা হয়ে যাবে। আর তখন বাতিলপন্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
আল্লাহ, যিনি তোমাদের জন্য গবাদিপশু সৃষ্টি করেছেন, যাতে তার কিছু সংখ্যকের উপর তোমরা আরোহণ কর এবং কিছু সংখ্যক হতে তোমরা খাও।
আর এতে তোমাদের জন্য রয়েছে প্রচুর উপকার এবং যাতে তোমরা অন্তরে যা প্রয়োজন বোধ কর সেগুলো দ্বারা তা পূর্ণ করতে পার। সেগুলোর উপর ও নৌযানের উপর তোমাদেরকে বহন করা হয়।
আর তিনি তোমাদেরকে তাঁর নিদর্শনাবলী দেখিয়ে থাকেন। অতএব, তোমরা আল্লাহর কোন্‌ কোন্‌ নিদর্শনকে অস্বীকার করবে?
তারা কি যমীনে বিচরণ করেনি তাহলে তারা দেখত তাদের পূর্ববর্তীদের পরিণাম কেমন হয়েছিল? তারা যমীনে ছিল এদের চেয়ে সংখ্যায় বেশী এবং শক্তিতে ও কীর্তিতে বেশী প্ৰবল। অতঃপর তারা যা অর্জন করত। তা তাদের কোন কাজে আসেনি।
অতঃপর তাদের কাছে যখন স্পষ্ট প্রমাণাদিসহ তাদের রাসূলগণ আসলেন, তখন তারা নিজেদের কাছে বিদ্যমান থাকা জ্ঞানে উৎফুল্ল হল। আর তারা যা নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করত তা-ই তাদেরকে বেষ্টন করল।
অতঃপর তারা যখন আমাদের শাস্তি দেখল তখন বলল, 'আমরা একমাত্র আল্লাহর উপর ঈমান আনলাম এবং আমরা তার সাথে যাদেরকে শরীক করতাম তাদের সাথে কুফরী করলাম।’
কিন্তু তারা যখন আমার শাস্তি দেখল তখন তাদের ঈমান তাদের কোন উপকারে আসল না [১]। আল্লাহর এ বিধান পূর্ব থেকেই তাঁর বান্দাদের মধ্যে চলে আসছে এবং তখনই কাফিররা ক্ষতিগ্ৰস্ত হয়েছে।
____________________
[১] অর্থাৎ আযাব সম্মুখে আসার পর তারা ঈমান আনছে। এ সময়কার ঈমান আল্লাহর কাছে গ্ৰহনীয় ও ধর্তব্য নয়। হাদীসে আছে- মুমূর্ষ অবস্থা ও মৃত্যু কষ্ট শুরু হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত আল্লাহ তা'আলা বান্দার তওবা কবুল করেন। মৃত্যু কষ্ট শুরু হলে আর তাওবা কবুল হয় না। [তিরমিয়ী: ৩৫৩৭, ইবনে মাজাহঃ ৪২৫৩]
سورة غافر
معلومات السورة
الكتب
الفتاوى
الأقوال
التفسيرات

سورةُ (غافرٍ) من السُّوَر المكِّية، بُدِئت بعد حمدِ الله بإثبات صفةِ المغفرة له عزَّ وجلَّ، ولا تكون مغفرةٌ إلا عن عِزَّةٍ وعلم وقدرة، فأثبتت هذه السورة كثيرًا من صفاتِ الكمال لله عزَّ وجلَّ، كما أظهرت قُدْرتَه عزَّ وجلَّ على العقاب؛ فالله غافرُ الذَّنب وقابلُ التَّوب، لكنه شديدُ العقاب، كما جاءت السورةُ على حُجَجِ المشركين وأدحضَتْها، ودعَتْ إلى الإيمان بالله ورسوله صلى الله عليه وسلم؛ فالله ناصرٌ دِينَه، ومُعْلٍ كتابَه.

ترتيبها المصحفي
40
نوعها
مكية
ألفاظها
1226
ترتيب نزولها
60
العد المدني الأول
84
العد المدني الأخير
84
العد البصري
82
العد الكوفي
85
العد الشامي
86

* سورة (غافرٍ):

سُمِّيت سورةُ (غافرٍ) بهذا الاسم؛ لورود هذه الصفةِ لله في أوَّل السورة.

1. صفات الله تعالى (١-٣).

2. نشاط المشركين العقليُّ ضد الرسول صلى الله عليه وسلم (٤-٦).

3. إعانة المسلمين للتصدي للمشركين (٧-٩).

4. مصير المشركين، وندَمُهم (١٠-١٢).

5. صفاته تعالى، وإفراده بالعبادة (١٣-١٧).

6. يوم الفصل، وأحوالُ الناس فيه (١٨-٢٢).

7. صور من مسيرة الدعاة (٢٣-٢٧).

8. مؤمن آل فرعون (٢٨-٤٥).

9. حُجَجٌ تدعو إلى الإيمان (٢٨-٢٩).

10. نماذجُ تطبيقية (٣٠-٣٤).

11. حُجَج المشركين الداحضةُ (٣٥- ٣٧).

12. حُجَجٌ تستوجب التوبةَ والإيمان (٣٨-٤٥).

13. ندمُ المشركين على كفرهم، وعذابُهم (٤٥-٥٠).

14. عهدٌ من الله لنصرِ المؤمنين (٥١-٥٥).

15. أسباب تمسُّك المشركين بشِرْكِهم (٥٦-٥٩).

16. توجيه المؤمنين لتوثيق رأيِهم بالسُّنَن الكونية (٦٠- ٦٨).

17. وعيدٌ للمشركين بمصيرهم الأُخْروي (٦٩-٧٧).

18. وعد الرسول بالانتصار له، وضربُ الأمثلة من الواقع (٧٨-٨٥).

ينظر: "التفسير الموضوعي لسور القرآن الكريم" لمجموعة من العلماء (6 /530).

مقصودُها بيانُ اتصافِ الله عزَّ وجلَّ بالعِزَّة الكاملة والعلمِ الشامل، ومغفرتِه لمن يشاء من عباده؛ فإنه لا يَقدِر على غفران ما يشاء لكل من يشاء إلا كاملُ العِزَّة، ولا يَعلَم جميعَ الذُّنوب ليسمى غافرًا لها إلا بالغُ العلم.

ينظر: "مصاعد النظر للإشراف على مقاصد السور" للبقاعي (2 /435).