ترجمة سورة التوبة

الترجمة البنغالية للمختصر في تفسير القرآن الكريم

ترجمة معاني سورة التوبة باللغة البنغالية من كتاب الترجمة البنغالية للمختصر في تفسير القرآن الكريم.
১. হে মুসলিমরা! এটি মূলতঃ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে দায়মুক্তি ও আরব উপদ্বীপের যে মুশরিকদের সাথে তোমরা চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছো তার পরিসমাপ্তির ঘোষণা মাত্র।
২. হে মুশরিকরা! তোমরা চার মাস পর্যন্ত এ জমিনে নিরাপদে ঘুরতে পারো। এরপর তোমাদের সাথে কোন চুক্তি বা নিরাপত্তা বহাল থাকবে না। তোমরা এ কথার প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রাখো যে, তোমরা কুফরির উপর অটল থাকলে নিশ্চয়ই আল্লাহর আযাব ও শাস্তি থেকে কখনো পালিয়ে যেতে পারবে না। তোমরা এ কথার প্রতিও দৃঢ় বিশ্বাস রাখো যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা এ দুনিয়াতে বন্দী ও হত্যা এবং কিয়ামতের দিন জাহান্নামে প্রবেশের মাধ্যমে কাফিরদেরকে লাঞ্ছিত করবেন। উক্ত ঘোষণাটি ওদেরকে শামিল করবে যারা নিজেদের চুক্তি ভঙ্গ করেছে এবং ওদেরকেও যাদের সাথে অনির্ধারিত সময়ের চুক্তি হয়েছে। তবে যাদের সাথে নির্ধারিত সময়ের চুক্তি হয়েছে যদিও তা চার মাসের বেশি হোক না কেন তার চুক্তিটি সে সময় পর্যন্ত পূর্ণ করা হবে।
৩. মহান হজ্জের দিন আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে সকল মানুষের নিকট এ ঘোষণা যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর রাসূল মুশরিকদের থেকে দায়মুক্ত। হে মুশরিকরা! তোমরা যদি শিরক থেকে তাওবা করে নাও তাহলে তোমাদের তাওবা তোমাদের জন্য অনেক উত্তম হবে। আর যদি তোমরা তাওবা থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও তাহলে তোমরা এ কথায় দৃঢ় বিশ্বাস রাখো যে, না তোমরা কখনো আল্লাহকে ফাঁকি দিতে পারবে, না তাঁর শাস্তিকে। হে রাসূল! আপনি কাফিরদেরকে এ দুঃখের সংবাদ দিন যে, তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি অপেক্ষা করছে।
৪. তবে যে মুশরিকদের সাথে তোমরা চুক্তিবদ্ধ হয়েছো এবং তারাও তোমাদের চুক্তিটি পুরা করছে উপরন্তু সে চুক্তির কোন ধারাই তারা ভঙ্গ করেনি তাহলে তারা উক্ত বিধানের বাইরেই থাকবে। তাই তোমরা চুক্তির সময় শেষ হওয়া পর্যন্ত তাদের চুক্তিটি পুরা করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর আদেশ মানা তথা চুক্তি পুরা করা এবং তাঁর নিষেধ মানা তথা খিয়ানত না করা মুত্তাকীদেরকে ভালোবাসেন।
৫. শত্রæদেরকে নিরাপত্তা দেয়ার সেই চার মাস শেষ হয়ে গেলে তোমরা মুশরিকদেরকে যেখানে পাও হত্যা করো। তাদের কিল্লাগুলোতে তাদেরকে ঘেরাও করো এবং তাদের পথে পথে ওত পেতে বসে থাকো। তবে তারা যদি শিরক থেকে আল্লাহর নিকট তাওবা করে এবং সালাত কায়েম করে ও নিজেদের সম্পদের যাকাত দেয় তখন তারা তোমাদের মুসলিম ভাই। তখন তাদের সাথে যুদ্ধ করা ছেড়ে দাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর তাওবাকারী বান্দাদের প্রতি অতি ক্ষমাশীল ও অত্যন্ত দয়ালু।
৬. হে রাসূল! যদি মুশরিকদের কেউ আপনার আশ্রয় কামনা করে যার রক্ত ও সম্পদ হালাল তাহলে আপনি তার আবেদনে সাড়া দিন। যেন সে কুর‘আন শুনতে পায়। অতঃপর তাকে নিরাপদ জায়গায় পৌঁছিয়ে দিন। তা এ জন্য যে, কাফিররা মূলতঃ এমন এক জাতি যারা এ ধর্মের মূলতত্ত¡ বুঝে না। তাই যদি তারা কুর‘আন তিলাওয়াত শুনে কিছু বুঝতে পারে তাহলে তারা হয়তোবা হিদায়েতপ্রাপ্ত হবে।
৭. মুশরিকদের জন্য আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে কোন ধরনের চুক্তি থাকা জায়িয নয়। তবে যে মুশরিকদের সাথে তোমরা মসজিদে হারামের নিকট হুদাইবিয়্যাহ সন্ধিতে আবদ্ধ হয়েছো তাদের ব্যাপার অবশ্যই ভিন্ন। হে মুসলিমরা! যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তোমাদের ও তাদের মধ্যকার এ চুক্তির উপর অটল থাকবে এবং তা ভঙ্গ করবে না ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা তার উপর কায়েম থাকো এবং তা ভঙ্গ করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর আদেশ-নিষেধ মানা মুত্তাকী বান্দাদেরকে ভালোবাসেন।
৮. তাদের জন্য কীভাবেই বা চুক্তি ও নিরাপত্তা থাকতে পারে; অথচ তারা তোমাদেরই শত্রæ। যদি তারা তোমাদেরকে সুযোগ মতো পেয়ে বসে তখন তারা তোমাদের ব্যাপারে আল্লাহ, আত্মীয়তার বন্ধন অথবা চুক্তি তথা কোন কিছুরই তোয়াক্কা করবে না। বরং তারা তোমাদেরকে নিকৃষ্ট শাস্তির স্বাদ আস্বাদন করাবে?! তারা মুখের সুন্দর কথা দিয়ে তোমাদেরকে সন্তুষ্ট করছে। তবে তাদের অন্তর তো মুখের অনুগামী নয়। তারা যা বলে তা কখনো পুরা করে না। বরং তাদের অধিকাংশই ওয়াদা ভঙ্গের কারণে আল্লাহর আনুগত্যের বাইরে।
৯. তারা আল্লাহর আয়াতসমূহের অনুসরণের পরিবর্তে - যেগুলোতে চুক্তি পুরা করার কথা রয়েছে - এ নশ্বর দুনিয়ার সামান্য স্বার্থ মূল্যকে বিকল্প হিসেবে গ্রহণ করেছে। যার মাধ্যমে তারা নিজেদের ব্যক্তিগত চাহিদা ও কুপ্রবৃত্তি পূরণ করতে পারবে। তাই তারা নিজেদেরকে সত্যের অনুসরণ থেকে দূরে সরিয়ে ও তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এমনকি তারা অন্যদেরকেও সত্য থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। বস্তুতঃ তারা যা করছে তা সত্যিই একটি নিকৃষ্ট আমল।
১০. তারা শত্রæতার কারণে কোন মু’মিনের ব্যাপারে আল্লাহ, আত্মীয়তার বন্ধন অথবা চুক্তি তথা কোন কিছুরই তোয়াক্কা করে না। বরং তারা যুলুম ও অত্যাচারের মাধ্যমে আল্লাহর দেয়া সীমারেখা অতিক্রম করছে।
১১. যদি তারা তাদের কুফরি থেকে আল্লাহ তা‘আলার নিকট তাওবা করে নেয়, কালিমায়ে শাহাদাত পাঠ করে, সালাত কায়েম করে ও তাদের সম্পদের যাকাত দেয় তখন তারা মুসলিম হিসেবেই পরিচিতি পাবে এবং তারা তাহলে তোমাদের ধর্মীয় ভাই হিসেবে পরিগণিত হবে। তাদের জন্যও তাই থাকবে যা তোমাদের জন্য থাকছে এবং তাদের উপরও তাই বর্তাবে যা তোমাদের উপর বর্তায়। তখন তাদের সাথে যুদ্ধ করা তোমাদের জন্য বৈধ হবে না। তাদের ইসলামই তখন তাদের রক্ত, সম্পদ ও ইজ্জত রক্ষা করবে। বস্তুতঃ আমি আমার আয়াতগুলোকে সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করছি কেবল জ্ঞানবান লোকদের জন্য। কারণ, তারাই তো তদ্বারা লাভবান হবে এবং অন্যকে লাভবান করবে।
১২. যাদের সাথে আপনি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য যুদ্ধ বন্ধ করার চুক্তি করেছেন সে মুশরিকরা যদি তাদের চুক্তি ও অঙ্গীকারগুলো ভঙ্গ করে এবং তোমাদের ধর্মের দোষ-ত্রæটি ধরে ও তার অবমাননা করে তাহলে তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করবে। কারণ, তারা হলো কাফিরদের পুরোধা ও নেতা। তাদের সাথে আর কোন চুক্তি ও অঙ্গীকার চলবে না। যা তাদের রক্তকে হিফাযত করবে। বরং তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করো। যাতে তারা নিজেদের কুফরি, চুক্তিভঙ্গ ও ধর্মের অবমাননা করা থেকে ফিরে আসে।
১৩. হে মু’মিনরা! তোমরা কেন এমন সম্প্রদায়ের সাথে যুদ্ধ করো না যারা নিজেদের চুক্তি ও অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে এবং তারা দারুন-নাদওয়ায় একত্রিত হয়ে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে মক্কা থেকে বের করে দেয়ার চেষ্টা চালিয়েছে। মূলতঃ তারাই তো সর্বপ্রথম তোমাদের সাথে যুদ্ধ শুরু করেছে যখন তারা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সাথে চুক্তিবদ্ধ খুজাআহ গোত্রের বিরুদ্ধে কুরাইশদের সাথে চুক্তিবদ্ধ বকর গোত্রকে সহযোগিতা করেছে। তোমরা কি তাদেরকে ভয় করে তাদের সাথে যুদ্ধ করতে অগ্রসর হচ্ছো না?! তোমরা যদি মু’মিন হয়ে থাকো তাহলে একমাত্র আল্লাহকেই ভয় করতে হবে। যিনি মানুষের ভয় পাওয়ার সর্বাধিক উপযুক্ত।
১৪. হে মু’মিনরা! তোমরা এ মুশরিকদের সাথে যুদ্ধ করো। কারণ, তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করলে আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের হাতেই তাদেরকে শাস্তি দিবেন। আর তা হবে তাদেরকে হত্যা করার মাধ্যমে। তেমনিভাবে তিনি পরাজিত ও বন্দী করার মাধ্যমে তাদেরকে লাঞ্ছিত করবেন আর তোমাদেরকে তাদের উপর জয়ী করে সাহায্য করবেন। উপরন্তু তিনি শত্রæদের হত্যা, বন্দী, পরাজয় এবং তাদের উপর মু’মিনদের বিজয়ের মাধ্যমে যে মু’মিন সম্প্রদায় যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি তাদের অন্তরের ব্যাধি দূর করবেন।
১৫. তেমনিভাবে তিনি তাঁর মু’মিন বান্দাদেরকে কাফিরদের উপর জয়ী করে তাদের অন্তরের রাগ মিটাবেন। আর হঠকারীদের মধ্যকার যাদের ব্যাপারে তিনি তাওবা কবুল করার ইচ্ছা করেন তাদের তাওবা কবুল করবেন যদি তারা তাওবা করে। যা ঘটেছে মক্কা বিজয় দিবসে সে এলাকার কিছু লোকের পক্ষ থেকে। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলাই জানেন তাদের মধ্যকার তাওবাকারীদের সত্যবাদিতা সম্পর্কে এবং তিনি তাঁর সৃষ্টি, পরিচালনা ও শরীয়তের ব্যাপারে অত্যন্ত প্রজ্ঞাময়।
১৬. হে মু’মিনরা! তোমরা কি মনে করছো যে, আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে কোন ধরনের পরীক্ষা ছাড়াই এমনিতেই ছেড়ে দিবেন?! বস্তুতঃ পরীক্ষা হলো আল্লাহ তা‘আলার চিরায়ত একটি নিয়ম। তাই তোমাদেরকেও পরীক্ষা করা হবে। যাতে তিনি তোমাদের মধ্যকার নিষ্ঠাবান মুজাহিদ বান্দাদের সম্পর্কে প্রকাশ্যভাবে জানতে পারেন। যারা আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও মু’মিনদেরকে বাদ দিয়ে বন্ধুত্বের জন্য কাফিরদের কাউকে বন্ধু বানায়নি এবং অন্তরঙ্গতার জন্য কাউকে অন্তরঙ্গ বানায়নি। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের সকল কর্ম সম্পর্কেই জানেন। তাঁর কাছে কোন কিছু গোপন নয়। তাই অচিরেই তিনি তোমাদেরকে তোমাদের আমলের প্রতিদান দিবেন।
১৭. ইবাদাত ও রকমারি আনুগত্য দিয়ে আল্লাহর মসজিদগুলোকে রক্ষণাবেক্ষণ করা মুশরিকদের কাজ হতে পারে না। তারা কুফরি প্রকাশ করে নিজেদের ব্যাপারে কুফরিকে স্বীকার করে। বস্তুতঃ এদের আমলগুলো বাতিল। কারণ, তা কবুলের বিশেষ শর্ত তথা ঈমান তাদের মধ্যে নেই। আর তারা কিয়ামতের দিন অচিরেই জাহান্নামে প্রবেশ করবে। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। তবে যদি তারা মুত্যুর আগে শিরক থেকে তাওবা করে নেয় তাহলে সেটা ভিন্ন কথা।
১৮. মসজিদ রক্ষণাবেক্ষণের উপযুক্ত ও তার অধিকার আদায়কারী ওরা যারা এক আল্লাহর উপর ঈমান আনে এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক করে না। উপরন্তু পরকালের উপর ঈমান আনে, সালাত কায়েম করে ও তাদের সম্পদের যাকাত দেয় আর আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পায় না। এদের পক্ষ থেকেই আশা করা যায় যে, তারা সত্যিকারার্থেই সঠিক পথের সন্ধান পাবে। আর মুশরিকরা তো এ থেকে অনেক দূরে।
১৯. হে মুশরিকরা! তোমরা কি হাজীদেরকে পানি পান করানো এবং মসজিদে হারামের রক্ষণাবেক্ষণ করা ওদের আমলের সমান মনে করো যারা আল্লাহর উপর ঈমান এনেছে এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক করেনি। উপরন্তু কিয়ামতের দিবসের প্রতিও ঈমান এনেছে এবং আল্লাহর বাণীকে সুউচ্চ ও কাফিরদের কথাকে নিচু করার জন্য নিজেদের জীবন ও সম্পদ দিয়ে জিহাদ করেছে। তোমরা কি তাদের সবাইকে আল্লাহর নিকট সম্মানের ক্ষেত্রে একরকম বানিয়ে ফেলোছো?! বস্তুতঃ তারা আল্লাহর নিকট কখনো এক হতে পারে না। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা যালিম মুশরিকদেরকে হিদায়েত করেন না। যদিও তারা কিছু কিছু ভালো কাজও করে। যেমন: হাজীদেরকে পানি পান করানো।
২০. যারা আল্লাহর উপর ঈমান এনেছে এবং কুফরির এলাকা থেকে ইসলামের এলাকার দিকে হিজরত করেছে উপরন্তু আল্লাহর পথে সম্পদ ও জীবন দিয়ে যুদ্ধ করেছে তারা আল্লাহর নিকট অন্যদের চেয়ে বেশি মর্যাদাশীল। আর যারা এসব বৈশিষ্ট্যের অধিকারী সত্যিকারার্থে তারা জান্নাত লাভে সফল হবে।
২১. তাদের প্রতিপালক আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে তাঁর রহমত ও সন্তুষ্টি নাযিলের আনন্দময় সুসংবাদ দিবেন। তিনি আর কখনো তাদের উপর অসন্তুষ্ট হবেন না। তেমনিভাবে তিনি তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশের সুসংবাদ দিবেন। যাতে রয়েছে চিরস্থায়ী নিয়ামত যা কখনো শেষ হবে না।
২২. তারা সে জান্নাতে অনন্ত কাল থাকবে। যা হবে দুনিয়াতে করা তাদের নেক আমলের প্রতিদান স্বরূপ। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলার নিকট নিষ্ঠার সাথে তাঁর আদেশ-নিষেধ মানা ব্যক্তির জন্য মহা প্রতিদান রয়েছে।
২৩. হে আল্লাহতে বিশ্বাসী ও তাঁর রাসূলের আনীত বিধানের অনুসারী মু’মিনরা! তোমরা নিজেদের বংশের অমুসলিম পিতা, ভাই ও অন্যান্য আত্মীয়কে এমন অন্তরঙ্গ বন্ধু বানাবে না যে, তোমরা তাদের নিকট মু’মিনদের গোপন কথা বলবে এবং সে ব্যাপারে তাদের পরামর্শ চাইবে যদি তারা কুফরিকে এক আল্লাহর ঈমানের উপর প্রাধান্য দেয়। যারা ওদেরকে কুফরির উপর অবিচল থাকার পরও বন্ধু বানিয়ে নিবে এবং তাদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করবে তারা বস্তুতঃ আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণ করলো এবং সে গুনাহের কারণে নিজকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছিয়ে নিজের উপরই যুলুম করলো।
২৪. হে রাসূল! আপনি মু’মিনদেরকে বলে দিন: যদি তোমাদের বাপ-দাদা, সন্তানাদি, ভাই-বেরাদর, স্ত্রীগণ, আত্মীয়-স্বজন, তোমাদের কামাই করা সম্পদ, যে ব্যবসায়ের তোমরা কাটতির আশা ও মন্দার আশঙ্কা করছো, যে ঘরে তোমরা অবস্থান করা পছন্দ করছো সেগুলো যদি তোমাদের নিকট আল্লাহ ও তাঁর রাসূল এবং তাঁর পথে জিহাদ করার চেয়ে বেশি পছন্দীয় হয় তাহলে তোমরা আল্লাহর প্রেরিতব্য শাস্তি ও আযাবের অপেক্ষা করো। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা তাঁর আনুগত্য থেকে বের হয়ে যাওয়া লোকদেরকে তাঁর পছন্দসই আমল করার তাওফীক দেন না।
২৫. হে মু’মিনরা! নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা বহু যুদ্ধে তোমাদের সংখ্যা ও সরঞ্জাম কম থাকা সত্তে¡ও মুশরিক শত্রæদের বিরুদ্ধে তোমাদেরকে সাহায্য করেছেন। যখন তোমরা আল্লাহর উপর ভরসা করে দুনিয়ার উপকরণগুলো গ্রহণ করেছো। অন্যদিকে তোমরা কখনো সংখ্যাধিক্যের অহঙ্কার বোধ করোনি। বস্তুতঃ সংখ্যাধিক্য কখনো তাদের উপর তোমাদের বিজয়ের কারণই ছিলো না। তাই হুনাইন যুদ্ধের দিন যখন তোমরা সংখ্যাধিক্যের অহঙ্কার করে বললে: আজ আমাদেরকে সংখ্যায় স্বল্পতাজনিত পরাজয় বরণ করতে হবে না। তখন তোমাদের গর্ব করা সেই সংখ্যাধিক্য তোমাদের কোন উপকারে আসেনি। বরং তোমাদের শত্রæরাই তোমাদের উপর জয়ী হয়েছে এবং পৃথিবী এতো প্রশস্ত হওয়া সত্তে¡ও তোমাদের জন্য তা সঙ্কীর্ণ হয়ে গেছে। ফলে তোমরা পরাজিত অবস্থায় শত্রæর প্রতি পৃষ্ঠ প্রদর্শন পূর্বক সেখান থেকে পালিয়ে গেলে।
২৬. তবে শত্রæ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূল ও মু’মিনদের উপর প্রশান্তি নাযিল করেছেন। ফলে তারা যুদ্ধের প্রতি আবারো অবিচল হয়ে উঠে। উপরন্তু তিনি এমন এক দল ফিরিশতা পাঠালেন যাঁদেরকে তোমরা দেখতে পাওনি এবং তিনি কাফিরদেরকে হত্যা, বন্দী, সম্পদ ছিনিয়ে নেয়া ও সন্তানদেরকে আটক করার মাধ্যমে শাস্তি দিয়েছেন। তাদেরকে দেয়া এ প্রতিদান মূলতঃ সর্বকালের রাসূলদের প্রতি মিথ্যারোপকারী এবং তাঁদের আনীত বিধান থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া কাফিরদেরই প্রতিদান।
২৭. উক্ত শাস্তির পর যে ব্যক্তি তার কুফরি ও ভ্রষ্টতা থেকে তাওবা করবে নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর তাওবা কবুল ও মঞ্জুর করবেন। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা তাঁর তাওবাকারী বান্দার প্রতি অতি ক্ষমাশীল ও পরম করুণাময়। কারণ, তিনি তাদের গুনাহ এবং কুফরির পরও তাদের তাওবা কবুল করছেন।
২৮. আল্লাহ ও তাঁর রাসূলে বিশ্বাসী এবং তাঁর শরীয়তের অনুসারী হে মু’মিনগণ! নিশ্চয়ই মুশরিকরা হলো নাপাক। কারণ, তাদের মধ্যে রয়েছে কুফরি, যুলুম, সমূহ নিকৃষ্ট চরিত্র ও প্রচুর বদ অভ্যাস। তাই তারা যেন এ বছর তথা নবম হিজরীর পর হজ্জ বা উমরাহরত অবস্থায় হলেও হারামে মাক্কী তথা মসজিদে হারামে প্রবেশ না করে। তোমরা যদি তারা যে খাদ্য ও বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা আমদানী করে তা বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা করো তাহলে নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা চাইলে তিনি নিজ অনুগ্রহে অচিরেই তোমাদের জন্য যথেষ্ট হবেন। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানেন। তিনি তোমাদের জন্য যে পরিকল্পনা করছেন তাতে তিনি অত্যন্ত প্রজ্ঞাময়।
২৯. হে মু’মিনগণ! তোমরা সেই কাফিরদের সাথে যুদ্ধ করো যারা আল্লাহ তা‘আলাকে শরীক বিহীন উপাস্য হিসেবে বিশ্বাস করে না এবং কিয়ামতের প্রতি ঈমান আনে না। তারা আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল তাদের উপর যে মৃত পশু, শূকরের গোস্ত, মদ ও সুদ হারাম করে দিয়েছেন তা থেকে বিরত থাকে না। তারা আল্লাহর দেয়া শরীয়তের প্রতি অনুগতও হয় না। চাই তারা ইহুদি হোক অথবা খ্রিস্টান। যতক্ষণ না তারা চাপের মুখে লাঞ্ছিতাবস্থায় নিজেদের হাতে জিযিয়া কর আদায় করে ততক্ষণ যুদ্ধ অব্যাহত থাকবে।
৩০. বস্তুতঃ ইহুদি ও খ্রিস্টান উভয়ই মুশরিক। ইহুদিরা তখনই আল্লাহর সাথে শিরক করলো যখন তারা দাবি করলো যে, নিশ্চয়ই উযাইর আল্লাহর ছেলে। আর খ্রিস্টানরাও তাঁর সাথে শিরক করলো যখন তারা দাবি করলো যে, নিশ্চয়ই ‘ঈসা মাসীহ আল্লাহর ছেলে। যে কথা বলে তারা মিথ্যা অপবাদ আরোপ করেছে তা মূলতঃ দলীল বিহীন তাদের একান্তই মুখের কথা। বস্তুতঃ তাদের এ কথা তাদের পূর্বেকার সেই মুশরিকদের কথার ন্যায় যারা বলেছিলো: নিশ্চয়ই ফিরিশতারা আল্লাহর কন্যা। আল্লাহ তা‘আলা তাদের এ অপবাদ থেকে মহাপবিত্র। আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে ধ্বংস করুন। কীভাবে তারা সুস্পষ্ট সত্য থেকে বাতিলের দিকে সরে যাচ্ছে?!
৩১. ইহুদিরা তাদের জাযকদেরকে এবং খ্রিস্টানরা তাদের মধ্যকার ইবাদতকারী পাদ্রীদেরকে আল্লাহকে বাদ দিয়ে নিজেদের পালনকর্তা বানিয়ে নিয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা তাদের উপর যা হারাম করে দিয়েছেন তারা তা ওদের জন্য হালাল করে দেয়। আর আল্লাহ তা‘আলা তাদের জন্য যা হালাল করে দিয়েছেন তারা তা ওদের উপর হারাম করে দেয়। উপরন্তু খ্রিস্টানরা মাসীহ ‘ঈসা ইবনু মারইয়ামকেও আল্লাহর পাশাপাশি উপাস্য বানিয়ে নিয়েছে। অথচ আল্লাহ তা‘আলা ইহুদিদের জাযক, খ্রিস্টানদের পাদ্রী এবং উযাইর ও ‘ঈসা ইবনু মারইয়ামকে শুধুমাত্র এ আদেশ করেছেন যে, তারা যেন এককভাবে তাঁরই ইবাদাত করে এবং তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরীক না করে। তিনি মহাপবিত্র একক উপাস্য। তিনি ছাড়া সত্য কোন মা’বূদ নেই। মুশরিক ও অন্যান্যরা তাঁর শরীক আছে বলে যা বলছে তা থেকে তিনি একান্তভাবে পূত-পবিত্র।
৩২. এ কাফির গোষ্ঠী ও অন্যান্য কাফির গোষ্ঠীরা উক্ত অপবাদ ও মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আনীত বিধানকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে মূলতঃ ইসলামকেই বাতিল ও খতম করতে চায়। উপরন্তু তারা তাতে থাকা আল্লাহর তাওহীদ সংশ্লিষ্ট সকল প্রকারের প্রকাশ্য ও সুস্পষ্ট দলীল-প্রমাণকেও বাতিল করতে চায়। অথচ তাঁর রাসূল যা নিয়ে এসেছেন তা সবই সত্য। আর আল্লাহ তা‘আলা অবশ্যই তাঁর দীনকে পরিপূর্ণ, সুস্পষ্ট ও অন্য ধর্মের উপর বিজয়ী করবেন। যদিও কাফিররা তাঁর দীনের পরিপূর্ণতা, সুস্পষ্টতা ও তার বিজয়কে অপছন্দ করে থাকে তারপরও আল্লাহ তা‘আলা তাঁর দীনকে পরিপূর্ণ, সুস্পষ্ট ও বিজয়ী করেই ছাড়বেন। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা কোন কিছু চাইলে তা অবশ্যই সংঘটিত হয়।
৩৩. আল্লাহ তা‘আলাই তাঁর রাসূল মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে মানুষের জন্য হিদায়েত স্বরূপ কুর‘আন এবং সত্য ধর্ম ইসলামকে দিয়ে পাঠিয়েছেন। যাতে তিনি তার মধ্যকার দলীল-প্রমাণ ও বিধানাবলীর মাধ্যমে তাকে অন্য ধর্মের উপর বিজয়ী করতে পারেন। যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে।
৩৪. আল্লাহর দেয়া শরীয়তের উপর আমলকারী ওহে মু’মিনগণ! নিশ্চয়ই বহু ইহুদি জাযক ও বহু খ্রিস্টান পাদ্রী কোন বৈধ অধিকার ছাড়াই মানুষের সম্পদ গ্রাস করে নেয়। তারা ঘুষ ও অন্যান্য মাধ্যমে মানুষের সম্পদ গ্রাস করে। আর মানুষদেরকে আল্লাহর দীনে প্রবেশে বাধা দেয়। হে রাসূল! যারা স্বর্ণ-রুপা জমা করে কিন্তু তাদের উপর বাধ্যতামূলক যাকাতটুকু তারা আদায় করে না, আপনি তাদেরকে কিয়ামত দিবসের বেদনাদায়ক শাস্তির দুঃসংবাদ দিন।
৩৫. তারা যা জমা করেছে অথচ তার পাওনা হক তারা আদায় করেনি কিয়ামতের দিন তার উপর জাহান্নামের আগুন জ্বালানো হবে। যখন সেগুলোর তাপ খুব কঠিন হবে তখন সেগুলোকে তাদের কপালে, পার্শ্ব দেশে ও পিঠে রাখা হবে। উপরন্তু তাদেরকে তিরস্কারের সুরে বলা হবে: এগুলো তোমাদের সেই সম্পদ যা তোমরা একদা জমা করেছো অথচ সেগুলোর বাধ্যতামূলক যাকাত তোমরা আদায় করোনি। তাই তোমরা আজ সেগুলোর খারাপ পরিণাম ও পরিণতি আস্বাদন করো।
৩৬. আল্লাহর বিধান ও ফায়সালায় এক বছরের মাসের সংখ্যা সর্বমোট বারোটি। যা আল্লাহ তা‘আলা আকাশ ও জমিন সৃষ্টির শুরুতে লাওহে মাহফ‚যে লিপিবদ্ধ করেছেন। উক্ত বারো মাসের চার মাসে আবার আল্লাহ তা‘আলা যুদ্ধ-বিগ্রহ হারাম করেছেন। যা লাগাতার তিন মাস তথা যুল-কি’দাহ, যুল-হিজ্জাহ ও মুহাররাম। আরেকটি একক মাস তথা রজব। উক্ত বাৎসরিক মাসের সংখ্যা ও সেগুলোর চারটিকে হারাম করে দেয়া মূলতঃ একটি সঠিক ধর্ম। তাই তোমরা এ হারাম মাসগুলোতে যুদ্ধ-বিগ্রহ করে এবং এগুলোর সম্মান নষ্ট করে নিজেদের উপর যুলুম করো না। আর তোমরা সকল প্রকারের মুশরিকের সাথে যুদ্ধ করো যেমনিভাবে তারা সবাই তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে। তোমরা জেনে রাখো যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সাহায্য ও অনুগ্রহ নিয়ে তাঁর আদেশ-নিষেধ মান্যকারী মুত্তাকীদের সাথেই রয়েছেন। আর আল্লাহ তা‘আলা যার সাথে রয়েছেন তাকে কেউ কখনো পরাজিত করতে পারবে না।
৩৭. মুহাররাম মাসের মর্যাদাকে অন্য কোন মাসের দিকে পিছিয়ে দেয়া বা অর্পণ করা এবং তাকে ওর স্থলাভিষিক্ত করা যা জাহিলী যুগের আরবরাই করতো তা কিন্তু আল্লাহর সাথে কুফরি করার উপর বাড়তি আরেকটি কুফরি। তারা হারাম মাসগুলোর ব্যাপারে তাঁর বিধানের সাথে কুফরি করেছে। শয়তান এরই মাধ্যমে আল্লাহর সাথে কুফরিকারীদেরকে পথভ্রষ্ট করে। সেই তাদের জন্য এ খারাপ পদ্ধতি চালু করে। ফলে তারা হারাম মাসকে হালাল মাসের সাথে বদলিয়ে এক বছরের জন্য হালাল করে নেয়। আবার অন্য বছর তাকে হারাম হিসেবেই বাকি রাখে। যাতে আল্লাহর হারামকৃত মাসগুলোর সংখ্যা ঠিক থাকে। যদিও তারা হুবহু মাসগুলো ঠিক রাখেনি। কারণ, তারা কোন মাসকে হালাল করলে তার পরিবর্তে অন্য মাসকে হারাম করে। এভাবেই তারা আল্লাহর হারামকৃত মাসগুলোকে হালাল করে। আর আল্লাহর বিধানকে অমান্য করে। শয়তান তাদের সামনে খারাপ কাজগুলোকে সুন্দরভাবে উপস্থান করেছে বিধায় তারা তা সম্পাদন করেছে। হারাম মাসকে পিছিয়ে দেয়ার বিদ‘আত সেগুলোরই একটি। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা কুফরির উপর হঠকারী কাফিরদেরকে ভালো কাজের তাওফীক দেন না।
৩৮. আল্লাহ ও তাঁর রাসূলে বিশ্বাসী এবং তাঁর দেয়া শরীয়তের উপর আমলকারী হে মু’মিনরা! তোমাদের কী হলো, যখন তোমাদেরকে আল্লাহর পথে জিহাদ তথা শত্রæর সাথে যুদ্ধের জন্য ডাকা হয় তখন তোমরা তা পালনে দেরি করো এবং নিজেদের বাড়ি-ঘরে অবস্থান করতে চাও?! তোমরা কি আল্লাহর পথে জিহাদকারীদের জন্য তৈরিকৃত আখিরাতের স্থায়ী নিয়ামতের পরিবর্তে দুনিয়ার এ নশ্বর জীবনের ভোগ-বিলাস ও অস্থায়ী আস্বাদনে বেশি সন্তুষ্ট?! অথচ আখিরাতের তুলনায় দুনিয়ার এ জীবনের ভোগ-বিলাস অতি সামান্য। তাহলে একজন বুদ্ধিমান কীভাবে স্থায়ীর উপর অস্থায়ী এবং মহানের উপর তুচ্ছকে নিজের জন্য পছন্দ করতে পারে?!
৩৯. হে মু’মিনরা! তোমরা যদি আল্লাহর পথে জিহাদ তথা নিজেদের শত্রæর সাথে যুদ্ধ করতে বের না হও তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে লাঞ্ছনা-গঞ্জনা ও পদানত করার মাধ্যমে শাস্তি দিবেন এবং তোমাদের পরিবর্তে এমন এক জাতি নিয়ে আসবেন যারা আল্লাহর একান্ত অনুগত হবে। যখন তাদেরকে যুদ্ধের জন্য বের হতে বলা হবে তখন তারা বেরিয়ে পড়বে। বস্তুতঃ তোমরা আল্লাহর আদেশের বিরোধিতা করে তাঁর কোন ক্ষতি করতে পারবে না। কারণ, তিনি তোমাদের প্রতি অমুখাপেক্ষী আর তোমরা তাঁর মুখাপেক্ষী। আল্লাহ তা‘আলা সব কিছু করতে সক্ষম। কেউ তাঁকে অক্ষম করতে পারে না। তাই তিনি তোমাদের ছাড়াই তাঁর ধর্ম ও নবীর সহযোগিতা করতে সক্ষম।
৪০. হে মু’মিনগণ! তোমরা যদি আল্লাহর রাসূলের সহযোগিতা না করো এবং তাঁর দেয়া আল্লাহর পথে জিহাদের ডাকে সাড়া না দাও তা হলে নিশ্চিত জেনে রাখো যে, তোমরা তাঁর সাথে না থাকা অবস্থায়ও আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে সহযোগিতা করেছেন যখন তাঁকে ও আবু বকরকে মুশরিকরা মক্কা থেকে বের করে দিয়েছিলো। যখন তাদের সাথে তৃতীয় আর কেউ ছিলো না। তারা যে সময়ে তাদেরকে অনুসন্ধানকারী কাফিরদের দৃষ্টি থেকে লুকিয়ে সাউর গুহায় অবস্থান করছিলো। যখন আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সাথী আবু বকর সিদ্দীক মুশরিকদের হাতে ধরা পড়ার আশঙ্কা বোধ করছিলো তখন তিনি তাকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন: তুমি চিন্তিত হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সাহায্য ও সহযোগিতা নিয়ে আমাদের সাথেই রয়েছেন। তখন আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলের অন্তরে প্রশান্তি নাযিল করলেন এবং তাঁর নিকট এমন এক সেনাবাহিনী নাযিল করলেন যাদেরকে তোমরা দেখতে পাওনি। তারা হলো সহযোগিতাকারী ফিরিশতা। উপরন্তু আল্লাহ মুশরিকদের দাবিকে পরাজিত করলেন এবং তাঁর বাণীকে সুউচ্চ করলেন তথা ইসলামকে মর্যদাশীল করলেন। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা তাঁর অস্তিত্ব, ক্ষমতা ও শত্রæকে পরাভ‚ত করার ব্যাপারে অত্যন্ত পরাক্রমশালী। কেউ তাঁকে পরাজিত করতে পারে না। তিনি শরীয়ত রচনা, ভাগ্য নির্ধারণ ও জগত পরিচালনায় সুকৌশলী।
৪১. হে মু’মিনগণ! তোমরা সহজ বা কঠিন, যুবক বা বৃদ্ধ তথা সর্বাবস্থায় আল্লাহর পথে জিহাদের জন্য বেরিয়ে পড়ো এবং নিজেদের জীবন ও সম্পদ দিয়ে যুদ্ধ করো। কারণ, এ বের হওয়া এবং নিজেদের জীবন ও সম্পদ দিয়ে যুদ্ধ করা নিজেদের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তায় ঘরে বসে থাকার চেয়ে দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য তুলনাতীত লাভজনক। যদি তোমরা এ ব্যাপারটি বুঝে থাকে তাহলে তা করার চেষ্টা করো।
৪২. হে নবী! যে মুনাফিকরা যুদ্ধে না যাওয়ার জন্য আপনার নিকট অনুমতি চেয়েছে আপনি তাদেরকে যেদিকে ডাকছেন তা যদি সহজলব্ধ গনিমতের মাল ও কষ্টহীন সফর হতো তাহলে তারা অবশ্যই আপনার আনুগত্য করতো। কিন্তু শত্রæর সাথে যুদ্ধ করতে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে বলে তারা আপনার ডাকে সাড়া দেয়নি। যে মুনাফিকরা যুদ্ধে না যাওয়ার জন্য আপনার নিকট অনুমতি চেয়েছে আপনি তাদের নিকট ফিরে আসলে তারা অচিরেই আল্লাহর কসম খেয়ে বলবে: আমরা আপনাদের সাথে জিহাদে বের হতে পারলে অবশ্যই বের হতাম। বস্তুতঃ তারা যুদ্ধে না গিয়ে এবং এ মিথ্যা কসমগুলো খেয়ে নিজেদেরকে আল্লাহর শাস্তির সম্মুখীন করে তারা নিজেদেরকেই ধ্বংস করবে। আল্লাহ তা‘আলা জানেন, তারা নিজেদের দাবি ও শপথে অবশ্যই মিথ্যুক।
৪৩. হে রাসূল! তাদেরকে যুদ্ধে না যাওয়ার অনুমতি দেয়ার ক্ষেত্রে আল্লাহ তা‘আলা আপনার চিন্তাগত ভুলকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। আপনি কেন তাদেরকে সহজেই যুদ্ধে না যাওয়ার অনুমতি দিয়ে দিলেন? অথচ আপনার ততক্ষণ পর্যন্ত অপেক্ষা করার দরকার ছিলো যতক্ষণ না তাদের উপস্থাপিত ওজর-আপত্তিতে তারা সত্যবাদী না মিথ্যাবাদী তা সুস্পষ্ট হতো। তখন আপনি মিথ্যাবাদীদেরকে অনুমতি না দিয়ে শুধু সত্যবাদীদেরকে অনুমতি দিতেন।
৪৪. হে রাসূল! যারা আল্লাহ তা‘আলা ও কিয়ামত দিবসে সত্যিকারের বিশ্বাসী তাদের উচিৎ নয় যে, তারা নিজেদের জান-মাল নিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করা থেকে পিছিয়ে থাকার জন্য আপনার অনুমতি কামনা করবে। বরং তাদের উচিৎ হবে তাদেরকে যুদ্ধের জন্য বের হতে বলা হলে তারা যুদ্ধের জন্য বের হবে এবং নিজেদের জান-মাল নিয়ে তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করবে। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা তাঁর এমন মুত্তাকী বান্দাদের সম্পর্কে অবশ্যই জানেন যারা কখনোই এমন ওজর ছাড়া আপনার অনুমতি চাইবে না, যা তাদেরকে যুদ্ধে যাওয়ার ক্ষেত্রে সত্যিই প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
৪৫. হে রাসূল! যারা আল্লাহর পথে জিহাদ না করার জন্য আপনার অনুমতি কামনা করে তারা অবশ্যই এমন মুনাফিক যারা আল্লাহ তা‘আলা ও কিয়ামতের দিবসে বিশ্বাস করে না এবং যাদের অন্তরে আল্লাহর দীন সম্পর্কে অবশ্যই সন্দেহ রয়েছে। ফলে তারা নিজেদের সন্দেহে অস্থিরভাবেই ঘুরপাক খাচ্ছে। সত্যের প্রতি তারা কোন পথই খুঁজে পাচ্ছে না।
৪৬. যদি তারা আল্লাহর পথে জিহাদ করার জন্য আপনার সাথে বের হওয়ার ইচ্ছা পোষণের দাবিতে সত্যবাদী হতো তাহলে তারা অবশ্যই যথাসময়ে যুদ্ধের সরঞ্জাম তৈরি করে তার জন্য প্রস্তুত থাকতো। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা আপনার সাথে তাদের বের হওয়া অপছন্দ করেছেন তাই তাদের জন্য যুদ্ধে বের হওয়ার কাজটি কঠিন হয়ে পড়েছে। ফলে তারা নিজেদের ঘরে বসে থাকাটাকেই প্রাধান্য দিয়েছে।
৪৭. এ মুনাফিকরা তোমাদের সাথে বের না হওয়াতে বিশেষ ফায়েদা রয়েছে। কারণ, তারা তোমাদের সাথে বের হলে তোমাদের অসহযোগিতা এবং সন্দেহ সৃষ্টির মাধ্যমে তারা আরো ফাসাদ বাড়িয়ে দিতো এবং তোমাদের গ্রæপগুলোতে দ্রæত পরস্পরের প্রতি বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিয়ে তোমাদের মাঝে ফাটল ধরিয়ে দিতো। হে মু’মিনগণ! তোমাদের মাঝে এমন কিছু লোক রয়েছে যারা তাদের মিথ্যা প্রচারণায় কান দিয়ে তা গ্রহণ ও প্রচার করে। ফলে তোমাদের মাঝে মতপার্থক্য দেখা দেয়। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা মুনাফিক যালিমদের সম্পর্কে ভালোই জানেন যারা মু’মিনদের মাঝে ষড়যন্ত্র ও সন্দেহ সৃষ্টি করে।
৪৮. এ মুনাফিকরা তাবুক যুদ্ধের আগে মু’মিনদের ঐক্যে ফাটল ধরিয়ে তাদের মাঝে ফাসাদ সৃষ্টি করতে চেয়েছিলো এবং তারা কৌশল করে আপনার সিদ্ধান্তসমূহকে উল্টে-পাল্টে দিতেছিলো। যাতে তাদের অপকৌশল আপনার জিহাদ করার প্রতিজ্ঞায় প্রভাব ফেলতে পারে। অথচ ইতিমধ্যে আপনার জন্য আল্লাহর সাহায্য ও সহযোগিতা এসে গেছে এবং আল্লাহ তা‘আলা তাঁর দীনকে বিজয়ী ও তাঁর শত্রæদেরকে পদানত করলেন। যদিও তা তাদের নিকট অপছন্দনীয় ছিলো। কারণ, তারা বস্তুতঃ সত্যের উপরই বাতিলের জয় চেয়েছিলো।
৪৯. মুনাফিকদের কেউ কেউ বিভিন্ন ধরনের ওজর-আপত্তি জানিয়ে বললো: হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাকে যুদ্ধে না যাওয়ার অনুমতি দিন। আপনি আমাকে আপনার সাথে যেতে বাধ্য করবেন না। যাতে আমি রোমান শত্রæদের স্ত্রীদেরকে দেখে ফিতনায় পড়ে গুনাহে লিপ্ত না হই। জেনে রাখো, তারা তাদের ধারণার চেয়ে আরো বড় ফিতনায় পড়েছে। যা হলো মুনাফিকী ও যুদ্ধে না যাওয়ার ফিতনা। নিশ্চয়ই জাহান্নাম কিয়ামতের দিন কাফিরদেরকে পরিবেষ্টন করে রাখবে। তাদের কেউ তা থেকে রক্ষা পাবে না। না কেউ তা থেকে পালানোর পথ পাবে।
৫০. হে আল্লাহর রাসূল! আপনি যদি আপনার পছন্দনীয় আল্লাহর কোন নিয়ামত তথা বিজয় কিংবা গনীমতের কোনটি পেয়ে যান তখন তারা তা অপছন্দ করে এবং সে জন্য তারা খুবই চিন্তিত হয়। আর যদি আপনার নিকট কঠিন সমস্যা কিংবা শত্রæর বিজয় জাতীয় কোন বিপদ এসে পড়ে তখন মুনাফিকরা বলে: আমরা ইতিপূর্বে নিজেদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করেছি এবং যুদ্ধে বের না হওয়ার দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অপর দিকে মু’মিনরা যুদ্ধে বেরিয়েছে। ফলে তারা বন্দীদশা ও হত্যার শিকার হয়েছে। আর এ মুনাফিকরা নিজেদের নিরাপত্তায় খুশি হয়ে তাদের পরিবারের নিকট ফিরে গিয়েছে।
৫১. হে রাসূল! আপনি এ মুনাফিকদেরকে বলে দিন: বস্তুতঃ আমাদের নিকট শুধু তাই পৌঁছাবে যা আল্লাহ তা‘আলা আমাদের জন্য লিখে রেখেছেন। তিনিই হলেন আমাদের অভিভাবক ও আশ্রয়স্থল। যাঁর নিকট আমরা আশ্রয় গ্রহণ করি। আর আমরা নিজেদের সকল ব্যাপারে তাঁর উপরই ভরসা করি। বস্তুতঃ মু’মিনরা তাদের সকল ব্যাপার কেবল তাঁর নিকটই ন্যস্ত করে থাকে। তিনি তাদের জন্য যথেষ্ট ও তাদের একান্ত উত্তম অভিভাবক।
৫২. হে রাসূল! আপনি তাদেরকে বলে দিন: তোমরা কি আমাদের ব্যাপারে জয় কিংবা শাহাদাতের কোন একটির অপেক্ষা করছো?! আসলে সে দু’টিই তো উত্তম পরিণতি। তবে আমরাও তোমাদের জন্য দু’টি খারাপ পরিণতির অপেক্ষা করছি। আর তা হচ্ছে এই যে, যেহেতু আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে তোমাদের সাথে যুদ্ধ করার অনুমতি দিয়েছেন সেহেতু তিনি যেন নিজ পক্ষ থেকে তোমাদের উপর ধ্বংসাত্মক কোন আযাব নাযিল করেন অথবা তিনি তোমাদেরকে আমাদের হাতে বন্দী কিংবা হত্যা করে শাস্তি দেন। যদি তিনি আমাদেরকে তোমাদের সাথে যুদ্ধের অনুমতি দেন। তাই তোমরা আমাদের পরিণতির অপেক্ষা করো। আর আমরাও তোমাদের পরিণতির অপেক্ষা করছি।
৫৩. হে রাসূল! আপনি তাদেরকে বলে দিন: তোমরা ইচ্ছা-অনিচ্ছায় যে সম্পদগুলো ব্যয় করে যাচ্ছো তা অবশ্যই ব্যয় করতে থাকো। তা তোমাদের পক্ষ থেকে কখনোই গ্রহণ করা হবে না। কেননা, তোমরা কুফরি করে আল্লাহর আনুগত্য থেকে বেরিয়ে আসার জন্য তা ব্যয় করছো।
৫৪. বস্তুতঃ তাদের দান কবুল না হওয়ার তিনটি কারণ রয়েছে: আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূলের সাথে কুফরি করা এবং সালাত আদায়ের সময় অলসতা করা ও তা থেকে পিছপা হওয়া। উপরন্তু স্বেচ্ছায় নিজেদের সম্পদগুলো ব্যয় না করা। বরং তারা তা বাধ্য হয়ে ব্যয় করে। কারণ, তারা না সালাত আদায়ে কোন সাওয়াবের আশা করে, না তাদের দান-দক্ষিণায়।
৫৫. হে রাসূল! মুনাফিকদের সন্তানাদি ও ধনৈশ্বর্য আপনাকে যেন আশ্চর্যান্বিত না করে এবং আপনি সেগুলোকে লাভজনক মনে করবেন না। কারণ, তাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততির পরিণাম খুবই খারাপ। আল্লাহ তা‘আলা সেগুলো অর্জনের কষ্ট ও ক্লান্তি দিয়ে এমনকি সেগুলোর মাঝে বিপদ নাযিল করে তাদেরকে শাস্তি দিবেন। পরিশেষে আল্লাহ তা‘আলা কুফরি অবস্থায় তাদের রূহগুলোকে শরীর থেকে বের করে নিবেন। ফলে তারা জাহান্নামের তলদেশে চিরস্থায়ীভাবে শাস্তিপ্রাপ্ত হবে।
৫৬. হে মু’মিনগণ! মুনাফিকরা তোমাদের সাথে মিথ্যা কসম খেয়ে বলবে: নিশ্চয়ই তারা তোমাদেরই অন্তর্ভুক্ত। অথচ তারা ভিতরগতভাবে তোমাদের কেউ নয়। যদিও তারা প্রকাশ করে যে, তারা তোমাদেরই অন্তর্ভুক্ত। বরং তারা এমন এক জাতি যারা মুশরিকদের উপর যে হত্যাযজ্ঞ ও বন্দীদশা নেমে এসেছিলো তা তাদের উপরও নেমে আসবে বলে ভয় পায়। তাই তারা ভয়ে ইসলামকে প্রকাশ করে।
৫৭. যদি এ মুনাফিকরা দূর্গ জাতীয় কোন আশ্রয়কেন্দ্র পেয়ে যেতো যাতে তারা নিজেদেরকে সংরক্ষণ করতে পারতো অথবা তারা পাহাড়ের এমন কোন গর্ত পেয়ে যেতো যাতে তারা লুকিয়ে থাকতে পারতো কিংবা তারা ঢুকার ন্যায় কোন সুড়ঙ্গ পথ পেয়ে যেতো তাহলে তারা তাতে অবশ্যই আশ্রয় গ্রহণ করতো এবং দ্রæত তাতে প্রবেশ করতো।
৫৮. হে রাসূল! মুনাফিকদের কেউ কেউ সাদাকা বন্টনের ক্ষেত্রে আপনার বদনাম করবে যখন তারা নিজেদের চাহিদা আন্দাজ সম্পদ না পাবে। বস্তুতঃ আপনি তাদেরকে তাদের চাহিদা মতো দিলে তারা আপনার উপর খুশি থাকবে। আর যদি তাদেরকে তাদের চাহিদা মাফিক না দেন তাহলে তারা আপনার প্রতি বিরক্তি প্রকাশ করবে।
৫৯. যদি এ মুনাফিকরা যারা সাদাকা বন্টনে আপনার বদনাম করেছে তারা যদি আল্লাহর বরাদ্দ এবং তাঁর রাসূলের দেয়া সম্পদে সন্তুষ্ট থাকতো এবং তারা বলতো: আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তা‘আলা অচিরেই তাঁর অনুগ্রহ থেকে যা চান আমাদেরকে দিবেন এবং আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলকে যা দিয়েছেন তা থেকে তিনিও অচিরেই আমাদেরকে দিবেন। নিশ্চয়ই আমরা এক আল্লাহর নিকট এ ব্যাপারে প্রত্যাশী যে, তিনি আমাদেরকে তাঁর অনুগ্রহ থেকে দিবেন। যদি তারা এমন করতো তাহলে তা আপনার বদনাম করা থেকে তাদের জন্য অনেক উত্তম হতো।
৬০. নিশ্চয়ই ওয়াজিব যাকাত বন্টন করা হবে ফকিরদের মাঝে - তারা এমন লোক যাদের নিকট কোন পেশা বা চাকুরিলব্ধ সম্পদ আছে ঠিকই তবে তা তাদের জন্য যথেষ্ট নয় এবং তাদের খোঁজ-খবরও কেউ নিচ্ছে না, মিসকীনদের মাঝে - যারা কোন কিছুরই মালিক নয়। ফলে তাদের অবস্থা ও কথার দরুন তারা মানুষের নিকটও গোপন নয়। এমনিভাবে যাকাত সংগ্রহকারীদের মাঝে - যাদেরকে প্রশাসন যাকাত সংগ্রহের জন্য পাঠায়, কাফিরদের মাঝে - যাদের সাথে এগুলোর মাধ্যমে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক করা হয় যাতে তারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে কিংবা দুর্বল ঈমানদারদের মাঝে যাতে তাদের ঈমান শক্তিশালী হয় অথবা এর মাধ্যমে যার অনিষ্ট প্রতিহত করা যায়। তেমনিভাবে তা বন্টন করা হবে গোলামদের মাঝে যাতে এর মাধ্যমে তাদেরকে স্বাধীন করা যায় এবং ঋণগ্রস্তদের মাঝে - যারা অপব্যয় ও গুনাহের জন্য ঋণ করেনি। যদি তারা ঋণ পরিশোধের জন্য কোন কিছু না পায় এবং তা বন্টন করা হবে আল্লাহর পথের মুজাহিদদেরকে তৈরি করার ক্ষেত্রে এবং মুসাফিরকে তা দেয়া হবে যার খরচাদি নির্বাহের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। বস্তুতঃ যাকাত বন্টনকে এদের মাঝে সীমাবদ্ধ করা আল্লাহর পক্ষ থেকেই নির্ধারিত বিধান। মূলতঃ আল্লাহ তাঁর বান্দাদের সকল সুবিধাদি জানেন, তিনি তাঁর পরিচালনা ও শরীয়ত নির্ধারণে অত্যন্ত প্রজ্ঞাময়।
৬১. মুনাফিকদের কেউ কেউ আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে কথায় কষ্ট দেয়। যখন তারা তাঁর ধৈর্য দেখে তখন তারা বলে: তিনি সবার কাছ থেকে কথা শুনেন ও তা বিশ্বাস করেন। সত্য ও মিথ্যার মাঝে তিনি পার্থক্য করতে পারেন না। হে রাসূল! আপনি তাদেরকে বলে দিন: নিশ্চয়ই রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ভালো কথা ছাড়া অন্য কিছু শুনেন না। তিনি আল্লাহকে বিশ্বাস করেন উপরন্তু সত্যবাদী মু’মিনরা যা সংবাদ দেয় তাও বিশ্বাস করেন এবং তাদের প্রতি দয়া করেন। কারণ, তাঁর নবী হয়ে আসাই সকল মু’মিনের জন্য রহমত স্বরূপ। আর যারা তাঁকে যে কোনভাবে কষ্ট দেয় তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
৬২. হে মু’মিনগণ! মুনাফিকরা আল্লাহর উপর কসম খেয়ে তোমাদেরকে বলবে: নিশ্চয়ই তারা ইতিপূর্বে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে কষ্ট দেয় এমন কিছু বলেনি। মূলতঃ তারা তোমাদেরকে খুশি করার জন্য এমনটি করছে। অথচ আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূলই বেশি উপযুক্ত যাঁদেরকে ঈমান ও আমলের মাধ্যমে খুশি করানো দরকার। যদি এরা সত্যিকার মু’মিন হতো তাহলে তারা তাই করতো।
৬৩. এ মুনাফিকরা কি জানে না যে, নিশ্চয়ই তারা নিজেদের এ কর্মকাÐের মাধ্যমে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের শত্রæতে রূপান্তরিত হচ্ছে। আর যারা তাঁদের সাথে শত্রæতা পোষণ করে নিশ্চয়ই তারা কিয়ামতের দিবসে জাহান্নামের আগুনে প্রবেশ করবে। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে?! আর এটি মহা লাঞ্ছনা ও অসম্মান বৈ আর কি?
৬৪. মুনাফিকরা এ কথার ভয় করে যে, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলের উপর কোন আয়াত নাযিল করে মু’মিনদেরকে তাদের গোপন কুফরি সম্পর্কে জানিয়ে দিবেন। হে রাসূল! আপনি বলে দিন: হে মুনাফিকরা! তোমরা চাইলে ধর্মের প্রতি আঘাত ও ঠাট্টা-বিদ্রƒপ চালিয়ে যেতে পারো। তবে আল্লাহ তা‘আলা কোন সূরা নাযিল করে কিংবা তাঁর রাসূলকে এ ব্যাপারে জানিয়ে তোমাদের জন্য আশঙ্কাজনক ব্যাপারটি প্রকাশ করে দিবেন।
৬৫. হে রাসূল! আপনি যদি মুনাফিকদেরকে ধর্মের প্রতি আঘাত ও মু’মিনদেরকে গালি দেয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন যা আল্লাহ তা‘আলা ইতিমধ্যে আপনাকে জানিয়ে দিয়েছেন তাহলে তারা অবশ্যই বলবে: আমরা কথার ফাঁকে একটু ঠাট্টা করছিলাম; বাস্তবিক দৃষ্টিতে কোন কিছু বলিনি। হে রাসূল! আপনি বলে দিন: তোমরা কি আল্লাহ, তাঁর আয়াতসমূহ এবং তাঁর রাসূলকে নিয়ে ঠাট্টা-মশকারা করছো?!
৬৬. এ মিথ্যা কৈফিয়ত তোমরা পেশ করো না। কারণ, তোমরা ঠাট্টার মাধ্যমে গোপন কুফরিকে প্রকাশ করে দিয়েছো। যদিও আমি তোমাদের এক দলকে মুনাফিকী ছেড়ে দেয়া এবং তা থেকে তাওবা করা ও আল্লাহর প্রতি নিষ্ঠার কারণে ক্ষমা করে দেবো তবে তোমাদের অন্য দলটিকে মুনাফিকীর উপর অটলতা এবং তা থেকে তাওবা না করার কারণে অবশ্যই শাস্তি দেবো।
৬৭. মুনাফিকরা চাই পুরুষ হোক কিংবা মহিলা - তারা সবাই মুনাফিকির ক্ষেত্রে একমত। তারা মূলতঃ মু’মিনদের বিপরীত। তারা অসৎ কাজের আদেশ করে এবং সৎ কাজে নিষেধ করে। উপরন্তু তারা সম্পদের ব্যাপারে কৃপণতা করে। তারা কখনোই তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না। তারা আল্লাহর আনুগত্যকে পরিত্যাগ করেছে। তাই আল্লাহ তা‘আলাও এর সুযোগ দানের ব্যাপারে তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। বস্তুতঃ মুনাফিকরা আল্লাহর আনুগত্য ও সত্য পথ থেকে বেরিয়ে তাঁর বিরুদ্ধাচরণ ও ভ্রষ্টতার পথে এগুচ্ছে।
৬৮. আল্লাহ তা‘আলা তাওবা না করা কাফির ও মুনাফিকদের ব্যাপারে এ ওয়াদা করেছেন যে, তিনি তাদেরকে জাহান্নামের আগুনে প্রবেশ করাবেন। যেখানে তারা চিরকাল থাকবে। শাস্তি হিসেবে তাই তাদের জন্য উপযুক্ত। উপরন্তু আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে তাঁর রহমত থেকে বিতাড়িত করেছেন এবং তাদের জন্য রয়েছে শাস্তি আর শাস্তি।
৬৯. হে মুনাফিক সম্প্রদায়! তোমরা কুফরি ও ঠাট্টা-মশকারায় পূর্ববর্তী মিথ্যারোপকারী উম্মতদের ন্যায়। তারা ছিলো তোমাদের চেয়ে আরো বেশি শক্তিশালী এবং বেশি সম্পদ ও সন্তানের মালিক। তারা নিজেদের জন্য বরাদ্দকৃত দুনিয়ার সূখ-স্বাচ্ছ্যন্দ ভোগ করে গেছে। সুতরাং হে মুনাফিকরা! তোমরাও তোমাদের জন্য বরাদ্দকৃত অংশ ভোগ করো যেমনিভাবে পূর্বের মিথ্যারোপকারী উম্মতরা তাদের অংশ ভোগ করে গেছে। আর তোমরা সত্যকে অস্বীকার এবং রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর মান-সম্মানে আঘাত দেয়ার কাজে লিপ্ত আছো যেমনিভাবে তারা লিপ্ত ছিলো। এ সকল খারাপ বৈশিষ্ট্যের অধিকারীদের আমলগুলো বাতিল হয়ে গেছে। কারণ, তা কুফরির দরুন আল্লাহর নিকট নষ্ট বলে প্রমাণিত হয়েছে। আর এরাই ক্ষতিগ্রস্ত যারা নিজেদেরকে ধ্বংসের দ্বারে উপনীত করে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
৭০. এ মুনাফিকদের নিকট কি মিথ্যারোপকারী উম্মতের কর্মকাÐ এবং তাদেরকে সে জন্য যে শাস্তি দেয়া হয়েছে তার খবর আসেনি?! যেমন: নূহ, হূদ, সালেহ এবং ইব্রাহীম (আলাইহিমুস-সালাম) এর সম্প্রদায়সমূহ, মাদয়ানবাসী ও লূতের (আলাইহিস-সালাম) সম্প্রদায়ের এলাকাসমূহ। তাদের রাসূলগণ সুস্পষ্ট প্রমাণ ও প্রকাশ্য দলীলাদি নিয়ে এসেছিলেন। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা তাদের উপর যুলুম করেননি। কারণ, তাদের রাসূলগণ তাদেরকে সতর্ক করেছেন। বরং তারাই আল্লাহর সাথে কুফরি ও তাঁর রাসূলদেরকে অস্বীকার করে নিজেদের উপর যুলুম করেছে।
৭১. মু’মিন পুরুষ ও মহিলারা একে অপরের সহযোগী ও সাহায্যকারী। কারণ, তাদের উভয়ের মাঝেই ঈমান রয়েছে। তারা সৎ কাজের আদেশ করে। সৎ কাজ বলতে আল্লাহর পছন্দনীয় তাঁর আনুগত্যের যে কোন ধরনকে বুঝানো হয়। যেমন: তাওহীদ ও নামায। এমনিভাবে তারা অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করে। অসৎ কাজ বলতে আল্লাহর অপছন্দনীয় যে কোন গুনাহকে বুঝানো হয়। যেমন: কুফরি ও সুদ। তারা পরিপূর্ণরূপে সালাত আদায় করে। আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে। এ সকল প্রশংসনীয় গুণাবলীতে গুণান্বিত ব্যক্তিদেরকে আল্লাহ তা‘আলা অচিরেই তাঁর রহমতের ছায়াতলে প্রবেশ করাবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা পরাক্রমশালী। কেউ তাঁকে পরাজিত করতে পারবে না। তিনি তাঁর সৃষ্টি, পরিচালনা ও শরীয়ত নির্ধারণে অতি প্রজ্ঞাময়।
৭২. আল্লাহ তা‘আলা তাঁর উপর বিশ্বাসী মু’মিন পুরুষ ও মহিলাদের সাথে এ ওয়াদা করেছেন যে, তিনি তাদেরকে কিয়ামতের দিন এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যার অট্টালিকাসমূহের তলদেশ দিয়ে অনেকগুলো নদী প্রবাহিত হবে। তারা সেখানে চিরকাল থাকবে। তাদের কখনো মৃত্যু হবে না। না তাদের নিয়ামত কখনো বন্ধ হবে। তিনি তাদের সাথে আরো ওয়াদা করেছেন যে, তিনি তাদেরকে স্থায়ী জান্নাতের সুন্দর সুন্দর ঘরে প্রবেশ করাবেন। তবে তিনি তাদের উপর নিজের যে সন্তুষ্টি নাযিল করবেন তা হলো সবচেয়ে বড়। উল্লিখিত প্রতিদান মূলতঃ সর্ববৃহৎ সফলতা। অন্য কোন সফলতা তার নিকটবর্তীও হতে পারে না।
৭৩. হে রাসূল! আপনি কাফিরদের সাথে তলোয়ার দিয়ে এবং মুনাফিকদের সাথে মুখ ও প্রমাণ দিয়ে যুদ্ধ করুন। তবে উভয় দলের সাথেই কঠিন আচরণ করুন। কারণ, তারা এরই উপযুক্ত। আর কিয়ামতের দিন তাদের অবস্থান হবে জাহান্নাম। বস্তুতঃ তাদের পরিণতি কতোই না নিকৃষ্ট।
৭৪. মুনাফিকরা আল্লাহর উপর মিথ্যা কসম খেয়ে বলবে: তাদের ব্যাপারে আপনাকে গালি দেয়া ও আপনার ধর্মকে নিন্দা করা বিষয়ক যে সংবাদ আপনার নিকট পৌঁছেছে তা তারা বলেনি। অথচ তাদের ব্যাপারে যে কুফরি কথা আপনার নিকট পৌঁছেছে তারা তা নিশ্চয়ই বলেছে। বরং তারা ঈমান গ্রহণের পর আবার কুফরি করেছে। নিশ্চয়ই তারা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে হত্যা করার ইচ্ছা করেছিলো। তবে সে ব্যাপারে তারা সফল হতে পারেনি। বস্তুতঃ যা অস্বীকার করা সম্ভব নয় তারা তাই অস্বীকার করেছে। সেটি হলো আল্লাহ তা‘আলা দয়া করে তাদেরকে যুদ্ধলব্ধ সম্পদের প্রতি অমুখাপেক্ষী বানিয়েছেন। যা মূলতঃ তিনি তাঁর নবীকে দান করেছেন। সুতরাং তারা যদি আল্লাহর নিকট তাদের মুনাফিকী থেকে তাওবা করে নেয় তাহলে তাদের এ তাওবা মুনাফিকীর উপর অটল থাকার চেয়ে অনেক ভালো। আর যদি তারা আল্লাহর নিকট তাওবা করা থেকে নিজেদের মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে দুনিয়াতে হত্যা ও বন্দীদশার মাধ্যমে এবং আখিরাতে জাহান্নামের আগুনের মাধ্যমে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দিবেন। সেদিন তাদের জন্য কোন অভিভাবক থাকবে না যে তাদেরকে আযাব থেকে রক্ষা করবে। আর না আযাবকে প্রতিরোধ করার জন্য তাদের কোন সাহায্যকারী থাকবে।
৭৫. মুনাফিকদের কেউ কেউ আল্লাহর নিকট এ বলে ওয়াদা করেছে যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা যদি আমাদেরকে অনুগ্রহ করেন তাহলে আমরা গরিবদেরকে দান করবো এবং আমরা সঠিক কর্ম সম্পাদনকারী নেককারদের অন্তর্ভুক্ত হবো।
৭৬. বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা যখন তাদেরকে অনুগ্রহ করলেন তখন তারা নিজেদের কৃত ওয়াদা রক্ষা করেনি। বরং তারা সম্পদকে আটকে রেখেছে; তা থেকে কোন দান তারা করে নি। উপরন্তু তারা ঈমান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে পশ্চাদগামী হয়েছে।
৭৭. তাই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সাথে কৃত ওয়াদা ভঙ্গ ও মিথ্যা বলার শাস্তি স্বরূপ কিয়ামত পর্যন্ত তাদের অন্তরে স্থায়ী মুনাফিকীর চ‚ড়ান্ত ব্যবস্থা করলেন।
৭৮. মুনাফিকরা কি জানে না যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তাদের মজলিসের গোপন ষড়যন্ত্র ও ধোঁকাবাজী সম্পর্কে ভালোই জানেন। আর নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা গায়েব সম্পর্কে সবজান্তা। তাঁর নিকট তাদের কর্মকাÐের কোন কিছুই গোপন নয়। তাই তিনি অচিরেই তাদেরকে এর শাস্তি দিবেন।
৭৯. যারা মু’মিনদের মধ্যকার স্বেচ্ছামূলক দানকারীদেরকে সামান্য দানের জন্য দোষারোপ করে। মু’মিনদের মধ্যে এমন স্বেচ্ছামূলক দানকারী আছে যাদের দান স্বল্প। অথচ তা তাদের সাধ্যানুযায়ী সর্বোচ্চ। যারা ওদেরকে নিয়ে ঠাট্টা করে বলে: তোমাদের এ সাদাকা কী উপকারে আসবে?! আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদেরকে নিয়ে ঠাট্টা করার দরুন তাদের ঠাট্টার প্রতিশোধ নিবেন। আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
৮০. হে রাসূল! আপনি তাদের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা চান বা নাই চান এমনকি আপনি যদি তাদের জন্য সত্তর বারও ক্ষমা চান তাতেও তাদের কোন লাভ হবে না। কারণ, তারা আল্লাহর ক্ষমাপ্রাপ্ত বান্দা নয়। তা এ জন্য যে, তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে কুফরি করেছে। আর আল্লাহ তা‘আলা তাঁর শরীয়ত থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে বেরিয়ে আসা লোকদেরকে সত্য গ্রহণের তাওফীক দেন না।
৮১. তাবুক যুদ্ধ থেকে পিছিয়ে পড়া মুনাফিকরা আল্লাহর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে আল্লাহর পথে যুদ্ধ করতে না গিয়ে খুবই খুশি। মু’মিনগণ যেভাবে আল্লাহর পথে নিজেদের জান-মাল নিয়ে যুদ্ধ করে সেভাবে মুনাফিকরা যুদ্ধ করতে অনিচ্ছুক। এমনকি তারা নিজেদের অন্য মুনাফিক ভাইদেরকেও নিরুৎসাহিত করতে গিয়ে বলে: তোমরা গরমের মধ্যে সফর করো না। আর তাবুক যুদ্ধ ছিলো গরমের সময়ে। হে রাসূল! আপনি তাদেরকে বলে দিন: জাহান্নামের আগুন যা মুনাফিকদের জন্য অপেক্ষা করছে তা এ গরম থেকে আরো অধিক বেশি গরম। হায়! যদি তারা বুঝতো।
৮২. যুদ্ধ থেকে পিছিয়ে পড়া মুনাফিকরা এ নশ্বর দুনিয়ার জীবনে একটুখানি হেসে নিক। তবে তাদেরকে আখিরাতের স্থায়ী জীবনে বেশি করে কাঁদতে হবে। যা হবে দুনিয়ার জীবনে তাদের অর্জনকৃত কুফরি, গুনাহ ও পাপরাশির প্রতিদান।
৮৩. হে নবী! আল্লাহ তা‘আলা যদি আপনাকে মুনাফিকীর উপর অটল এমন কোন মুনাফিক দলের নিকট ফিরিয়ে আনে অতঃপর তারা আপনার সাথে অন্য যুদ্ধে বের হওয়ার অনুমতি চায় তাহলে আপনি তাদেরকে বলে দিন: হে মুনাফিকরা! তোমরা কখনো আমার সাথে আল্লাহর পথে যুদ্ধ করতে বের হয়ো না। যা তোমাদের জন্য শাস্তি স্বরূপ এবং আমার সাথে তোমাদের অবস্থানের দরুন যে ফাসাদগুলো বর্তাবে তা থেকে বাঁচার জন্য। তোমরা তো তাবুক যুদ্ধে না গিয়ে এবং তা থেকে পিছিয়ে পড়ে অনেক খুশি। তাই তোমরা পিছিয়ে পড়া অসুস্থ, মহিলা ও বচ্চাদের সাথে অবস্থান করো ও বসে থাকো।
৮৪. হে রাসূল! আপনি কখনো মৃত কোন মুনাফিকের জানাযার নামায পড়বেন না। না তার কবরের নিকট তার মাগফিরাতের দু‘আর জন্য দাঁড়াবেন। কারণ, তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে কুফরি করেছে। উপরন্তু তারা আল্লাহর আনুগত্যের বাইরে থাকা অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেছে। আর যার অবস্থা এমন হবে তার জন্য কোন নামায নেই এবং দু‘আও নেই।
৮৫. হে রাসূল! এ মুনাফিকদের সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি যেন আপনাকে আশ্চর্যান্বিত না করে। দুনিয়ার জীবনে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে এরই মাধ্যমে শাস্তি দিতে চান। মূলতঃ তা হলো তারা এ পথে যে কষ্ট-ক্লেশ সহ্য করছে এবং এ ক্ষেত্রে তারা যে বিপদাপদের সম্মুখীন হচ্ছে তাই। আর আল্লাহ তা‘আলা এটাও চান যে, কুফরি অবস্থায় যেন তাদের রূহগুলো তাদের শরীর থেকে বেরিয়ে যায়।
৮৬. যখন আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর উপর এমন কোন সূরা নাযিল করেন যাতে আল্লাহর প্রতি ঈমান ও তাঁর পথে জিহাদের আদেশ রয়েছে তখন তাদের মধ্যকার ধনী ও স্বচ্ছল ব্যক্তিরা আপনার কাছ থেকে সরে যাওয়ার অনুমতি চায় এবং তারা বলে: আপনি আমাদেরকে রেহাই দিন। আমরা দুর্বল ও পক্ষাঘাতগ্রস্তদের সাথে পেছনেই থেকে যাই।
৮৭. এ মুনাফিকরা যখন দুর্বল ও অক্ষমদের সাথে পেছনে থাকতে সন্তুষ্ট তখন তারা নিজেদের লাঞ্ছনা এবং অবমাননা নিয়েও সন্তুষ্ট। আল্লাহ তা‘আলা তাদের কুফরি ও মুনাফিকীর দরুন তাদের অন্তরে মোহর মেরে দিয়েছেন। তাই তারা নিজেদের প্রকৃত লাভের বিষয়গুলোও জানে না।
৮৮. তবে রাসূল ও তাঁর সাথী মু’মিনরা ওদের ন্যায় আল্লাহর পথে জিহাদ করা থেকে পিছপা হয়নি। তারা নিজেদের জান ও মাল দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করেছে। ফলে আল্লাহর নিকট তাদের প্রতিদান স্বরূপ ছিলো দুনিয়ার লাভ হাসিল তথা বিজয় ও যুদ্ধলব্ধ সম্পদ এবং আখিরাতের লাভ হাসিল তথা জান্নাতে প্রবেশ করা উপরন্তু তাদের কাক্সিক্ষত উদ্দেশ্য হাসিল ও আশঙ্কা থেকে মুক্তি।
৮৯. আরো আল্লাহ তা‘আলা তাদের জন্য এমন জান্নাত তৈরি রেখেছেন যার অট্টালিকাসমূহের তলদেশ দিয়ে অনেকগুলো নদী প্রবাহিত। তাতে তারা চিরকাল থাকবে। কখনো তারা ধ্বংস হবে না। এ প্রতিদান মূলতঃ সর্বোচ্চ সফলতা যার নিকটবর্তী আর কোন সফলতা নেই।
৯০. এদিকে মদীনা ও তার আশপাশের বেদুঈনদের একটি গোষ্ঠী আল্লাহর রাসূলের নিকট এসে নিজেদের ওজর-আপত্তি জানিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ না করার অনুমতি চেয়েছে। অন্যদিকে আরেকটি দলও যুদ্ধে যায়নি। তবে তারা যুদ্ধে না যাওয়ার জন্য কোন ওজর-আপত্তি পেশ করেনি। কারণ, তারা নবী এবং আল্লাহর ওয়াদাকে বিশ্বাস করতো না। এরা অচিরেই তাদের কুফরির দরুন অতি যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি পাবে।
৯১. তবে মহিলা, শিশু, অসুস্থ, অক্ষম, অন্ধ ও ফকির যারা যুদ্ধের প্রস্তুতির জন্য কোন সম্পদ খুঁজে পাচ্ছে না তাদের উপর কোন যুদ্ধ নেই। এদের কারো উপর যুদ্ধে না যাওয়ার কোন গুনাহ নেই। কারণ, তাদের আপত্তিগুলো যথাযথ। যদি তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি নিষ্ঠাবান হয় এবং তাঁর দেয়া শরীয়তের উপর আমল করে। এ জাতীয় আপত্তি পেশকারী নিষ্ঠাবানদেরকে শাস্তি দেয়া হবে না। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা নিষ্ঠাবানদের গুনাহ ক্ষমাকারী এবং তাদের প্রতি অত্যন্ত দয়ালু।
৯২. তেমনিভাবে আপনার সাথে যুদ্ধে না যাওয়া ওই লোকদেরও কোন গুনাহ নেই যারা আপনার নিকট এসে যুদ্ধের বাহন হিসেবে আপনার নিকট কোন পশু তলব করেছে। আর আপনি তাদেরকে বলেছেন: আমি এমন কোন পশু পাচ্ছি না যা তোমাদেরকে বাহন হিসেবে দেবো। তখন তারা আপনার কাছ থেকে চলে গেলো। অথচ তাদের চোখগুলো থেকে অশ্রæ গড়িয়ে পড়ছিলো। এ দুঃখে যে, তারা খরচ করার মতো না নিজেদের কাছে কোন কিছু পেয়েছে, না আপনার কাছে। যখন আল্লাহ তা‘আলা বর্ণনা করলেন যে, ওজরওয়ালাদেরকে শাস্তি দেয়ার কোন সুযোগ নেই তখন তিনি পাকড়াও ও শাস্তির উপযুক্তদের কথা উল্লেখ করলেন। তিনি বলেন:
৯৩. যারা আপনার নিকট জিহাদে না যাওয়ার অনুমতি চেয়েছে; অথচ তারা তা করতে সক্ষম তাদের জন্য শাস্তি অবধারিত। কারণ, তাদের নিকট প্রস্তুতি নেয়ার সুযোগ ও ব্যবস্থা ছিলো। তারা নিজেদের ব্যাপারে লাঞ্ছনা ও অবমাননায় সন্তুষ্ট। তারা এ ব্যাপারে সন্তুষ্ট যে, তারা পেছনে পড়া লোকদের সাথে নিজেদের ঘরেই অবস্থান করবে। মূলতঃ আল্লাহ তা‘আলা তাদের অন্তরের উপর মোহর মেরে দিয়েছেন। তাই কোন উপদেশ তাতে কাজ করে না। আর এ মোহরের কারণেই তারা জানে না যে, কোন জিনিসে তাদের জন্য ফায়েদা রয়েছে, ফলে তারা তা গ্রহণ করবে আর কোন জিনিসে তাদের বিপদ রয়েছে ফলে তারা তা বর্জন করবে।
৯৪. মুসলমানরা যখন জিহাদ থেকে ফিরে আসবে তখন জিহাদ থেকে পিছিয়ে পড়া মুনাফিকরা তাদের সামনে অনেকগুলো অহেতুক কৈফিয়ত পেশ করবে। তাই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবী ও মু’মিনদেরকে এর প্রতিউত্তর শিখিয়ে দিলেন যে, তোমরা বলবে: তোমরা এ সকল মিথ্যা ওজর পেশ করো না। আমরা কখনো তোমাদের এ সকল সংবাদ বিশ্বাস করবো না। আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের অন্তরের কিছু কথা আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন। আর আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল অচিরেই দেখবেন, তোমরা কি দ্রæত তাওবা করছো? তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের তাওবা কবুল করবেন। না কি তোমরা নিজেদের মুনাফিকীর উপর অটল থাকছো? এরপর তোমাদেরকে আল্লাহর দিকে ফিরিয়ে নেয়া হবে। যিনি সব কিছু জানেন। ফলে তিনি তোমাদেরকে তোমাদের কর্মকাÐ সম্পর্কে অবহিত করবেন এবং তার প্রতিদান দিবেন। তাই তোমরা দ্রæত তাওবা ও নেক আমল করো।
৯৫. হে মু’মিনগণ! তোমরা ফিরে আসলে এ পিছপা হওয়া মুনাফিকরা তাদের মিথ্যা অজুহাতগুলোকে মজবুত করার জন্য অচিরেই আল্লাহর নামে কসম খাবে। যাতে তোমরা তাদেরকে তিরস্কার ও নিন্দা করা থেকে বিরত থাকো। তোমরা ক্ষোভ সহকারে তাদেরকে পরিত্যাগ ও প্রত্যাখ্যান করো। তারা নাপাক ও তাদের ভেতর খারাপ। যে ঠিকানায় তারা আশ্রয় গ্রহণ করবে তা হবে জাহান্নাম। আর তা হবে তাদের কামাই করা গুনাহ ও মুনাফিকীর প্রতিদান।
৯৬. হে মু’মিনরা! এ পিছপা হওয়া মুনাফিকরা তোমাদের নিকট কসম খাবে যেন তোমরা তাদের উপর খুশি হয়ে যাও এবং তাদের ওজর-আপত্তিগুলো গ্রহণ করো। তোমরা তাদের উপর সন্তুষ্ট হয়ো না। তোমরা তাদের উপর সন্তুষ্ট হলে প্রকৃতার্থে তোমাদের প্রতিপালকের বিরোধিতা করা হবে। কারণ, তিনি কুফরি ও মুনাফিকীর মাধ্যমে তাঁর আনুগত্য থেকে বেরিয়ে আসা সম্প্রদায়ের উপর খুশি হন না। তাই হে মুসলমানরা! যার উপর আল্লাহ তা‘আলা সন্তুষ্ট নন তার উপর সন্তুষ্ট হওয়ার ব্যাপারে তোমরা খুব সতর্ক থাকো।
৯৭. বেদুঈনরা কাফির ও মুনাফিক হলে তাদের কুফরি ও মুনাফিকী শহরবাসীদের কুফরি ও মুনাফিকীর চেয়ে খুবই মারাত্মক হয়। ধর্ম সম্পর্কে অজ্ঞ থাকাই তাদের জন্য স্বাভাবিক। তেমনিভাবে এটাও স্বাভাবিক যে, তারা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর উপর নাযিলকৃত ফরয, সুন্নাত এবং বিধানগত সূত্রাবলী সম্পর্কে অনভিজ্ঞ হবে। কারণ, তাদের মাঝে রয়েছে কঠোরতা, লোকসমাজ থেকে দূরে থাকা ও তাদের সাথে না মেশা। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা তাদের অবস্থা সম্পর্কে ভালোই জানেন। তাঁর নিকট তাদের কোন অবস্থাই গোপন নয়। তিনি তাঁর পরিচালনা ও শরীয়ত নির্ধারণে অতি প্রজ্ঞাময়।
৯৮. কিছু কিছু বেদুঈন মুনাফিক এ কথা বিশ্বাস করে যে, সে যে সম্পদটুকু আল্লাহর পথে ব্যয় করে তা সবই বস্তুতঃ ক্ষতির কারণ ও জরিমানা স্বরূপ। কারণ, সে মনে করে, কিছু দান করলে তাকে সাওয়াব দেয়া হবে না এবং কৃপণতা দেখালেও আল্লাহ তা‘আলা তাকে শাস্তি দিবেন না। তবুও সে কখনো কখনো মানুষের কট‚ কথার ভয়ে এবং লোক দেখানোর জন্য ব্যয় করে। হে মু’মিনরা! সে অপেক্ষা করে যে, তোমাদের উপর কোন অকল্যাণ নাযিল হোক তাহলে সে তোমাদের থেকে নিষ্কৃতি পাবে। বরং তারা যে মু’মিনদের উপর সময়ের অশুভ পরিবর্তন এবং অকল্যাণ পতিত হওয়ার আশা করছিলো আল্লাহ তা‘আলা তা মু’মিনদের উপর পতিত না করে তাদের উপরই পতিত করলেন। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা তাদের সব কথাই শুনেন এবং তাদের গোপন সকল ভাবনাই তিনি জানেন।
৯৯. বেদুঈনদের কেউ কেউ আবার আল্লাহ তা‘আলা ও কিয়ামতের দিবসে বিশ্বাস করে এবং সে যে সম্পদটুকু আল্লাহর পথে ব্যয় করে তা আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য একটি সাওয়াবের কাজ এবং রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর দু‘আ ও ইস্তিগফার পাওয়ার উসিলা বলে মনে করে। বস্তুতঃ আল্লাহর পথে ব্যয় ও রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর দু‘আ আল্লাহর নিকট সাওয়াব হিসেবে পরিগণিত হবে। সে অচিরেই তাঁর নিকট সে সাওয়াব পাবে তথা আল্লাহ তা‘আলা তাকে তাঁর সুপ্রশস্ত রহমতের ছায়াতলে প্রবেশ করাবেন। যা তাঁর ক্ষমা ও জান্নাতকে শামিল করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর তাওবাকারী বান্দাকে ক্ষমা করেন এবং তিনি তাদের প্রতি অত্যন্ত দয়ালু।
১০০. মুহাজির তথা যারা আল্লাহ তা‘আলার জন্য নিজেদের ঘর-বাড়ি ছেড়েছে এবং আনসার তথা যারা তাঁর নবী ও মুহাজিরদেরকে সহযোগিতা করেছে তাদের মধ্যে যারা সর্বপ্রথম দ্রæত ঈমান এনেছে এবং যারা নিষ্ঠার সাথে বিশ্বাস, কথা ও কাজে ঈমানে অগ্রবর্তী মুহাজির ও আনসারীদের অনুসরণ করেছে আল্লাহ তা‘আলা তাদের সবার উপর সন্তুষ্ট হয়ে তাদের আনুগত্য ও ধার্মিকতা কবুল করেছেন এবং তারাও তাঁর উপর সন্তুষ্ট। কারণ, তিনি তাদেরকে তাঁর মহা প্রতিদান দিয়েছেন এবং তাদের জন্য তৈরি করেছেন এমন জান্নাতসমূহ যেগুলোর অট্টালিকাসমূহের তলদেশে প্রবাহিত হচ্ছে অনেকগুলো নদী। তারা সেখানে চিরকাল থাকবে। এ প্রতিদান মূলতঃ মহান সফলতা।
১০১. মদিনার আশপাশের কিছু বেদুঈনও মুনাফিক এবং মদীনার কিছু অধিবাসীও মুনাফিক। যারা মুনাফিকীর উপর অটল ও অবিচল। যাদেরকে হে রাসূল! আপনি চিনেন না, তবে আল্লাহ তাদেরকে চিনেন। তাই তিনি অচিরেই তাদেরকে দু’বার শাস্তি দিবেন। একবার দুনিয়াতে যা তাদের মুনাফিকী প্রকাশ করে এবং তাদেরকে হত্যা ও বন্দী করার কারণ হয়। আরেকবার আখিরাতে কবরের শাস্তির মাধ্যমে। অতঃপর তাদেরকে কিয়ামতের দিবসে জাহান্নামের তলদেশের কঠিন শাস্তির দিকে ঠেলে দেয়া হবে।
১০২. মদীনাবাসীদের আরেকটি গোষ্ঠী কোন ওজর ছাড়াই যুদ্ধে যায়নি। তারা নিজেরাও স্বীকার করেছে যে, নিশ্চয়ই তাদের কোন ওজর ছিলো না এবং তারা কোন মিথ্যা ওজরও পেশ করেনি। বরং তারা নিজেদের পূর্বের নেক আমলসমূহ তথা আল্লাহর আনুগত্য করা, তাঁর শরীয়তকে আঁকড়ে ধরা এবং তাঁর পথে জিহাদ করাকে একটি খারাপ আমলের সাথে মিশিয়ে ফেলেছে। তবে তারা আল্লাহর নিকট তাওবা কবুল হওয়া ও ক্ষমার আশা করছে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর তাওবাকারী বান্দার প্রতি অতি ক্ষমাশীল ও অত্যন্ত দয়ালু।
১০৩. হে রাসূল! আপনি তাদের সম্পদ থেকে যাকাত নিন। যার মাধ্যমে আপনি তাদেরকে গুনাহ ও পাপরাশির ময়লা থেকে পবিত্র করবেন এবং তাদের পুণ্য বাড়িয়ে দিবেন। উপরন্তু তা গ্রহণের পর তাদের জন্য দু‘আ করুন। কারণ, আপনার দু‘আ তাদের জন্য রহমত ও প্রশান্তি স্বরূপ। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা আপনার দু’আ শুনছেন এবং তিনি তাদের কর্মকাÐ ও নিয়্যাত সম্পর্কে ভালোই জানেন।
১০৪. জিহাদ থেকে পিছপা হওয়া এবং আল্লাহর নিকট তাওবাকারী লোকেরা জেনে রাখুক যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর তাওবাকারী বান্দাদের তাওবা ও সাদাকা কবুল করেন। অথচ তিনি সেগুলোর অমুখাপেক্ষী। তবে তিনি সাদাকাকারীর সাদাকার সাওয়াব দিয়ে দেন। নিশ্চয়ই তিনি তাঁর তাওবাকারী বান্দাদের তাওবা কবুল ও তাদের প্রতি দয়া করেন।
১০৫. হে রাসূল! আপনি জিহাদ থেকে পিছিয়ে পড়া এবং নিজেদের পাপ থেকে তাওবাকারীদেরকে বলে দিন, তোমরা নিজেদের পূর্বের ক্ষতিকে পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করো এবং নিজেদের আমলগুলো আল্লাহর জন্য নিষ্ঠার সাথে ও তাঁর সন্তুষ্টি মাফিক করো। অচিরেই আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও মু’মিনগণ তোমাদের আমলগুলো দেখবেন এবং অচিরেই তোমাদেরকে নিজেদের সর্বজ্ঞ প্রতিপালকের নিকট উত্থিত করা হবে। তিনি তোমাদের প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সবকিছুই জানেন। তাই তিনি অচিরেই তোমাদেরকে তোমাদের দুনিয়ার সমূহ কর্মকাÐ জানিয়ে দিবেন এবং তার প্রতিদানও দিবেন।
১০৬. তাবুক যুদ্ধ থেকে পিছিয়ে পড়া আরেকটি গোষ্ঠী রয়েছে। তাদের কোন ওজর ছিলো না। এদের ব্যাপারে অপেক্ষা করতে হবে আল্লাহর বিধান ও ফায়সালার জন্য। তিনি যা চান তাদের ব্যাপারে ফায়সালা করবেন। তারা তাওবা না করলে তিনি তাদেরকে শাস্তি দিবেন। আর তাওবা করলে তাদের তাওবা কবুল করবেন। আল্লাহ তা‘আলা নিশ্চয়ই জানেন, কে তাঁর শাস্তির উপযুক্ত আর কে তাঁর ক্ষমার উপযুক্ত। তিনি তাঁর শরীয়ত ও পরিচালনায় অত্যন্ত প্রজ্ঞাময়। আর তারা হলো, মুরারাহ ইবনুর-রাবী’, কা’ব ইবনু মালিক ও হিলাল ইবনু উমাইয়াহ।
১০৭. মুনাফিকদের কেউ কেউ মসজিদ তৈরি করেছে আল্লাহর আনুগত্যের জন্য নয়। বরং তা মুসলমানদের ক্ষতি, মুনাফিকদেরকে শক্তিশালী করে কুফরি প্রকাশ, মু’মিনদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি এবং মসজিদ তৈরির আগ থেকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে যুদ্ধ কারীদের জন্য অপেক্ষা ও প্রস্তুতির মানসে তৈরি করা হয়েছে। অবশ্যই এ মুনাফিকরা তোমাদের সামনে কসম করে বলবে: আমরা কেবল এরই মাধ্যমে মুসলমানদের প্রতি দয়া করারই ইচ্ছা পোষণ করেছি। অথচ আল্লাহ তা‘আলা সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, নিশ্চয়ই তারা নিজেদের এ দাবিতে চরম মিথ্যুক।
১০৮. হে নবী! এ ধরনের মসজিদে সালাত আদায়ের জন্য মুনাফিকরা আপনাকে ডাকলে আপনি সাড়া দিবেন না। কারণ, মসজিদে ক্বুবার প্রথম ভিত্তিই হয় আল্লাহভীতির উপর। তাতে সালাত আদায় কুফরির উপর প্রতিষ্ঠিত মসজিদে সালাত আদায়ের চেয়ে উত্তম। মসজিদে ক্বুবায় এমন কিছু লোক রয়েছে যারা পানি দিয়ে প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সকল নাপাক থেকে এবং তাওবা ও ইস্তিগফারের মাধ্যমে সকল পাপ থেকে পবিত্রতা অর্জন করা পছন্দ করে। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য নাপাক এবং গুনাহ থেকে পবিত্রতা অর্জনকারীদেরকে ভালোবাসেন।
১০৯. যে নিজের ভিত্তিটুকু স্থাপন করলো আল্লাহভীতির উপর তাঁর আদেশ-নিষেধ মান্য করে এবং বেশি বেশি নেক আমল করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে সেকি ওর সমান হতে পারে যে মসজিদ বানিয়েছে মুসলমানদের ক্ষতি, কুফরিকে শক্তিশালী ও মু’মিনদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টির জন্য?! না তারা উভয়ে কখনো এক সমান হতে পারে না। কারণ, প্রথম জনের ভিত্তি খুবই শক্তিশালী যা পড়ে যাওয়ার কোন আশঙ্কাই নেই। আর এর দৃষ্টান্ত হলো তার ন্যায় যে কোন একটি ভিত্তি স্থাপন করেছে গর্তের পাড়ে অতঃপর তা ভেঙ্গে পড়ে গেলো। ফলে তার ভিত্তি তাকে নিয়েই জাহান্নামের গভীরে পতিত হলো। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা কুফরি, মুনাফিকী ইত্যাদির মাধ্যমে যুলুমকারী সম্প্রদায়কে ভালো কাজের তাওফীক দেন না।
১১০. ক্ষতির জন্য তৈরি মসজিদ তাদের অন্তরে স্থায়ী সন্দেহ ও মুনাফিকী সৃষ্টি করবে। যতক্ষণ না মৃত্যু অথবা তলোয়ারের আঘাতে তাদের অন্তরগুলো ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যায়। বস্তুতঃ আল্লাহ তাঁর বান্দাদের কর্মকাÐ ভালোই জানেন। তিনি ভালো-মন্দের প্রতিদানের ফায়সালা বিষয়ে অতি প্রজ্ঞাময়।
১১১. নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা দয়া করে মু’মিনদের থেকে বেশি দাম তথা জান্নাতের বিনিময়ে তাদের জীবন ক্রয় করেছেন। ফলে তারা আল্লাহর বাণীকে বিজয়ী করার জন্য কাফিরদের সাথে যুদ্ধ করবে। তাতে তারা কাফিরদেরকে হত্যা করবে এবং কাফিররাও তাদেরকে হত্যা করবে। আল্লাহ তা‘আলা মূসা (আলাইহিস-সালাম) কে দেয়া তাওরাতে, ঈসা (আলাইহিস-সালাম) কে দেয়া ইঞ্জীলে এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে দেয়া কুর‘আনে এ ব্যাপারে সত্য ওয়াদা করেছেন। আল্লাহর চেয়ে বেশি অঙ্গীকার পূর্ণকারী আর কেউ নেই। তাই হে মু’মিনরা! তোমরা আল্লাহর সাথে যে ক্রয়-বিক্রির চুক্তি করেছো সেই চুক্তি নিয়ে খুশি ও আনন্দিত হও। কারণ, তাতে তোমরা বিপুল লাভ করেছো। আর এ ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি সত্যিই মহা সফলতা।
১১২. এ জাতীয় প্রতিদান অর্জনকারীরা আল্লাহর অপছন্দনীয় ও রাগের বস্তু থেকে তাঁর পছন্দনীয় ও সন্তুষ্টির বস্তুর ফিরে আসে। যারা আল্লাহর ভয়ে ও তাঁর সামনে অতিশয় বিনয়ী হয়ে সত্যিকারার্থেই তাঁর আনুগত্য করে এবং সর্বাবস্থায় তাঁদের প্রতিপালকের প্রশংসা করে। যারা রোযাদার, নামাযী, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদেশ এবং নিষেধ মান্যকারী উপরন্তু তাঁর আদেশ ও নিষেধের হিফাযতকারী। হে রাসূল! আপনি এ বৈশিষ্ট্যাবলীর অধিকারী মু’মিনদেরকে এমন বস্তুর সংবাদ দিন যা দুনিয়া ও আখিরাতে তাদেরকে আনন্দিত করবে।
১১৩. নবী ও মু’মিনদের উচিত হবে না আল্লাহর নিকট মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা। যদিও তারা এদের আত্মীয় হোক না কেন। অথচ তাদের ব্যাপারে এ কথা একেবারেই সুস্পষ্ট যে, তারা জাহান্নামী। কারণ, তারা শিরকের উপর মৃত্যু বরণ করেছে।
১১৪. তবে ইব্রাহীম (আলাইহিস-সালাম) এর তাঁর পিতার জন্য ক্ষমা চাওয়ার ব্যাপারটি তার সাথে করা একটি ওয়াদার কারণে হয়েছে। তিনি তাঁর পিতার ইসলাম গ্রহণের আশায় তার সাথে এ ওয়াদা করেছিলেন যে, তিনি অবশ্যই তার জন্য দু‘আ করবেন। তবে যখন ইব্রাহীম (আলাইহিস-সালাম) এর নিকট এ কথা সুস্পষ্ট হলো যে, তাঁর পিতা নিশ্চয়ই আল্লাহর শত্রæ যেহেতু কোন উপদেশই তার কোন লাভে আসছে না অথবা তিনি ওহীর মাধ্যমে এ কথা জেনেছেন যে, তাঁর পিতা কাফির অবস্থায় মারা যাবে তখন তিনি তাঁর পিতার জন্য ইস্তিগফার করা থেকে অবসর নিলেন। বস্তুতঃ তাঁর পিতার জন্য ইস্তিগফারের ব্যাপারটি ছিলো তাঁরই গবেষণালব্ধ। তা ওহীর মাধ্যমে আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা কোন বিধানের বিরোধিতা নয়। বস্তুতঃ ইব্রাহীম (আলাইহিস-সালাম) ছিলেন আল্লাহর প্রতি বেশি অনুরাগী এবং তাঁর যালিম সম্প্রদায়ের প্রতি বেশি ক্ষমাশীল।
১১৫. আল্লাহ তা‘আলা কোন জাতিকে হিদায়েতের তাওফীক দেয়ার পর তিনি তাদের জন্য বর্জন করা আবশ্যকীয় হারাম কাজের বর্ণনা না দিয়ে তাদের উপর ভ্রষ্টতার ফায়সালা করেন না। তার পরও তারা তাতে লিপ্ত হলে তিনি তাদের উপর ভ্রষ্টতার ফায়সালা করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা সবকিছুই জানেন। তাঁর নিকট কোন কিছুই গোপন নয়। ইতিপূর্বে না জানা অনেক বিষয়ই তিনি তোমাদেরকে শিখিয়েছেন।
১১৬. নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা আসমান ও জমিনের মালিক। সেগুলোতে তাঁর কোন শরীক নেই। সেগুলোর কোন কিছুই তাঁর নিকট গোপন নয়। যাকে তিনি জীবন দিতে চান তাকে জীবন। আর যাকে মৃত্যু দিতে চান তাকে মৃত্যু দিয়ে থাকেন। হে মানুষ! তোমাদের জন্য আল্লাহ ছাড়া এমন কোন অভিভাবক নেই যে তোমাদের সমূহ কর্মকাÐের দায়িত্বভার বহন করবে। না তোমাদের জন্য এমন কোন সাহায্যকারী রয়েছে যে তোমাদের বিপদাপদ প্রতিহত করে শত্রæর উপর তোমাদেরকে বিজয়ী করবে।
১১৭. আল্লাহ তা‘আলা নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর তাওবা গ্রহণ করেছেন যখন তিনি মুনাফিকদেরকে তাবুক যুদ্ধে না যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। তেমনিভাবে তিনি মুহাজির এবং আনসারীদের তাওবাও কবুল করেছেন যারা যুদ্ধ থেকে পিছপা হয়নি। বরং তারা কঠিন গরম, কম সম্বল ও শত্রæর শক্তিকে তোয়াক্কা না করে তাবুক যুদ্ধে যাওয়ার ক্ষেত্রে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর অনুসরণ করেছে। অথচ তখন পরিস্থিতি এমন ছিলো যে, তাদের এক দলের অন্তর ঘুরে যাওয়ায় যুদ্ধ না করার ইচ্ছাই পোষণ করছিলো। কারণ, তখন তাদের সার্বিক অবস্থা ছিলো খুবই কঠিন। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে যুদ্ধে বের হওয়া এবং তার উপর অটল থাকার তাওফীক দিয়েছেন। উপরন্তু তাদের তাওবা কবুল করেছেন। নিশ্চয়ই তিনি তাদের প্রতি অত্যন্ত করুণাশীল ও দয়ালু। আর তাঁর দয়ার একটি নমুনা হলো তাদেরকে তাওবার তাওফীক দেয়া ও তা কবুল করা।
১১৮. নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তিন জনের তাওবা কবুল করেছেন। তারা হলো, কা’ব ইবনু মালিক, মুরারাহ ইবনুর-রাবী’ এবং হিলাল ইবনু উমাইয়াহ। আল্লাহর রাসূলের সাথে তাবুক যুদ্ধে না যাওয়ার দরুন তাদের তাওবা ও তাওবা কবুল করাকে পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মানুষকে উদ্দ্যেশ্য করে তাদেরকে পরিত্যাগ করার আদেশ করেছেন। ফলে তাদেরকে চিন্তা ও বিষণœতা পেয়ে বসে এবং দুনিয়া অতি প্রশস্ত হওয়ার পরও তাদের নিকট তা সঙ্কীর্ণ মনে হয়। এমনকি তারা সমাজচ্যুত হওয়ায় তাদের অন্তরগুলোও সঙ্কীর্ণ হয়ে যায়। উপরন্তু তারা এ কথা জেনে যায় যে, একমাত্র আল্লাহ ছাড়া তাদের কোন আশ্রয়স্থল নেই। যার নিকট তারা আশ্রয় গ্রহণ করবে। ফলে আল্লাহ তা‘আলা তাদের উপর দয়া করে তাদেরকে তাওবার তাওফীক দেন। এমনকি তাদের তাওবা কবুলও করেন। নিশ্চয়ই তিনি তাঁর বান্দাদের তাওবা কবুলকারী ও তাদের প্রতি অতি দয়ালু।
১১৯. হে আল্লাহতে বিশ্বাসী ও তাঁর রাসূলের অনুসারী এবং তাঁর শরীয়তের উপর আমলকারী ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে তাঁকেই ভয় করো এবং ঈমান, কথা ও কাজে সত্যবাদীদের সাথেই থাকো। কারণ, সত্য ছাড়া তোমাদের কোন নাজাত নেই।
১২০. রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজেই যুদ্ধের জন্য বের হলে মদীনাবাসী ও তার আশপাশের বেদুঈনদের জন্য তা থেকে পিছপা হওয়ার কোন অধিকার নেই। এমনকি তাদের কোন অধিকার নেই নিজেদের জীবনের ব্যাপারে কার্পণ্য করে সেগুলোকে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর জীবন থেকে দূরে হিফাযতে রাখা। বরং তাদের জন্য আবশ্যক রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর জীবনের সামনে তাদের জীবনকে বিলিয়ে দেয়া। আর তা এ জন্য যে, আল্লাহর পথে তাদের কোন পিপাসা, ক্লান্তি ও ক্ষুধা লাগলে এমনকি কাফিরদেরকে রাগান্বিত করে এমন কোন জায়গায় তারা অবস্থান করলে উপরন্তু তারা শত্রæকে হত্যা বা বন্দী করলে অথবা তাদের থেকে যুদ্ধলব্ধ কোন সম্পদ পেলে কিংবা তাদেরকে পরাজিত করলে এর পরিবর্তে আল্লাহ তা‘আলা তাদের জন্য কবুল হওয়া নেক আমলের সাওয়াব লিখে দিবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা সৎকর্মশীলদের প্রতিদান নষ্ট করেন না। বরং তিনি তাদেরকে তা পুরোপুরি দিয়ে দেন। উপরন্তু তা থেকে আরো বাড়িয়ে দেন।
১২১. তারা কম-বেশি যতো সম্পদই ব্যয় করুক না কেন এবং যে কোন উপত্যকাই তারা অতিক্রম করুক না কেন তাদের জন্য সেই ব্যয় ও সফর জাতীয় আমল লিখে রাখা হবে। যাতে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে এগুলোর প্রতিদান দিতে পারেন। আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে পরকালে তাদের নেক আমলসমূহের প্রতিদান দিবেন।
১২২. মু’মিনদের জন্য উচিত নয় যে, তারা সবাই যুদ্ধের জন্য বের হয়ে যাবে। যাতে শত্রæরা তাদের মূলোৎপাটন করতে না পারে। তারা কেন এমন করে না যে, তাদের একদল জিহাদের জন্য বের হবে। আর আরেক দল জিহাদে না গিয়ে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সাথী হবে। তারা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর মুখ থেকে কুর‘আন ও শরীয়তের বিধানাবলী শুনে ধর্মীয় প্রজ্ঞা হাসিল করবে। এরপর বাড়ি ফিরে অর্জিত জ্ঞান দিয়ে নিজের সম্প্রদায়কে ভীতি প্রদর্শন করবে। যাতে তারা আল্লাহর আযাব ও শাস্তির ভয়ে তাঁর আদেশ-নিষেধ মান্য করে। এ বিধানটি ছিলো সে যুদ্ধগুলোর ক্ষেত্রে যখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এদিক সেদিক কোন যুদ্ধদল পাঠাতেন এবং সে জন্য সাহাবীদের এক দলকে মনোনীত করতেন।
১২৩. আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদেরকে তাদের আশপাশের কাফিরদের সাথে যুদ্ধ করার আদেশ করেছেন। কারণ, তারা মু’মিনদের নিকটবর্তী হওয়ার দরুন তাদের জন্য একটি ভয়ঙ্কর ব্যাপার। তেমনিভাবে আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদেরকে আদেশ করেছেন তাদের সাথে নিজেদের শক্তি ও কঠোরতা প্রকাশের জন্য। যাতে তারা ভয় পায় এবং তাদের অনিষ্ট প্রতিরোধ করা সম্ভবপর হয়। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নিজ সাহায্য ও সহযোগিতা নিয়ে মুত্তাকী মু’মিনদের সাথেই রয়েছেন।
১২৪. যখন আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলের উপর কোন সূরা নাযিল করেন তখন মুনাফিকদের কেউ কেউ ঠাট্টা ও মশকারা করে প্রশ্ন করে যে, এ নাযিলকৃত সূরাটি মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আনীত বিধানের প্রতি তোমাদের কার ঈমান বাড়িয়ে দিয়েছে? বস্তুতঃ যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছে এবং তাঁর রাসূলকে বিশ্বাস করেছে এ সূরাটি তাদের পূর্বের ঈমানের উপর আরো ঈমান বাড়িয়ে দিয়েছে। তারা ওহী নাযিল হওয়াতে খুবই খুশি। কারণ, তাতে তাদের দুনিয়া ও আখিরাতের ফায়েদা রয়েছে।
১২৫. এদিকে বিধান ও ঘটনা সম্বলিত কুর‘আনের আয়াত নাযিল হলে কুর‘আন অস্বীকার করার কারণে মুনাফিকদের রোগ ও কদর্যতা আরো বেড়ে যায়। তাই কুর‘আন বেশি নাযিল হলে তাদের অন্তর ব্যাধি আরো বেড়ে যায়। কারণ, কোন কিছু নাযিল হলেই তারা তাতে সন্দেহ করে আর কুফরির উপর তারা মৃত্যু বরণ করে।
১২৬. আল্লাহ তা‘আলা প্রতি বছর একবার বা দু’বার মুনাফিকদের মুনাফিকী ও তাদের গোমর ফাঁস করে তাদেরকে বিপদের সম্মুখীন করা দেখে তারা কেন তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে না?! তারা এ কথা জানা সত্তে¡ও যে, স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলাই তাদের সাথে এ আচরণ করছেন তারপরও তারা কুফরি থেকে তাওবা করে না। না তারা মুনাফিকী থেকে ফিরে আসে। না তারা নিজেদের উপর নাযিল হওয়া বিপদের কথা স্মরণ করে এবং এ কথা মনে করে যে, এটি নিশ্চয়ই আল্লাহর পক্ষ থেকেই ঘটেছে।
১২৭. আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর উপর মুনাফিকদের অবস্থা সম্বলিত কোন সূরা নাযিল করলে কিছু মুনাফিক অন্যদের দিকে তাকিয়ে বলে: কেউ কি তোমাদেরকে দেখতে পাচ্ছে? কেউ না দেখলে তারা দ্রæত মজলিস থেকে উঠে যায়। আল্লাহ তা‘আলা কেন তাদের অন্তরগুলোকে হিদায়েত ও কল্যাণ থেকে ফিরিয়ে দেয় না এবং তাদের অসহযোগিতা করে না। কারণ, তারা তো একটি অবুঝ সম্প্রদায়।
১২৮. হে আরব জাতি! তোমাদের নিকট তোমাদের বংশেরই একজন রাসূল এসেছেন। তিনি তোমাদের মতোই একজন আরবীভাষী। তোমাদেরই কষ্ট তাঁর কষ্ট। তিনি তোমাদের হিদায়েত ও তোমাদের প্রতি গুরুত্ব দেয়ার ব্যাপারে খুবই আগ্রহী। তিনি মু’মিনদের প্রতি বিশেষভাবে অতি করুণাসিক্ত ও পরম দয়ালু।
১২৯. তারা আপনার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে আপনার আনীত বিধানকে বিশ্বাস না করলে হে রাসূল! আপনি তাদেরকে বলে দিন: আমার জন্য একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই যথেষ্ট। তিনি ছাড়া সত্য কোন মা’বূদ নেই। আমি কেবল তাঁর উপরই নির্ভর করছি। তিনি মহান আরশের মালিক।
سورة التوبة
معلومات السورة
الكتب
الفتاوى
الأقوال
التفسيرات

سورةُ (التَّوْبةِ) ارتبَطتِ ارتباطًا وثيقًا بسورة (الأنفال)، حتى ظنَّ بعضُ الصَّحابة أنهما سورةٌ واحدة؛ فقد أكمَلتِ الحديثَ عن أحكام الحرب والأَسْرى. وسُمِّيتْ بـ (الفاضحةِ)؛ لأنها فضَحتْ سرائرَ المنافقين، وأحوالَهم، وصفاتِهم. وقد نزَلتْ سورة (التَّوْبةِ) في غزوتَيْ (حُنَينٍ)، و(تَبُوكَ). وأعلَنتْ هذه السورةُ البراءةَ من الشركِ والمشركين وأفعالهم، وبيَّنتْ أحكامَ المواثيق والعهود مع المشركين، معلِنةً في خاتمتها التوبةَ على مَن تاب وتخلَّف من الصحابة - رضي الله عنهم - عن الغزوِ: {ثُمَّ تَابَ عَلَيْهِمْ لِيَتُوبُوٓاْۚ} [التوبة: 118].

ترتيبها المصحفي
9
نوعها
مدنية
ألفاظها
2505
ترتيب نزولها
113
العد المدني الأول
130
العد المدني الأخير
130
العد البصري
130
العد الكوفي
129
العد الشامي
130

تعلَّقتْ سورةُ (التوبة) بأحداثٍ كثيرة، وهي (الفاضحةُ)؛ لذا صحَّ في أسبابِ نزولها الكثيرُ؛ من ذلك:

* قوله تعالى: {أَجَعَلْتُمْ سِقَايَةَ اْلْحَآجِّ وَعِمَارَةَ اْلْمَسْجِدِ اْلْحَرَامِ كَمَنْ ءَامَنَ بِاْللَّهِ وَاْلْيَوْمِ اْلْأٓخِرِ وَجَٰهَدَ فِي سَبِيلِ اْللَّهِۚ لَا يَسْتَوُۥنَ عِندَ اْللَّهِۗ وَاْللَّهُ لَا يَهْدِي اْلْقَوْمَ اْلظَّٰلِمِينَ} [التوبة: 19]:

عن النُّعمانِ بن بشيرٍ رضي الله عنهما، قال: «كنتُ عند مِنبَرِ رسولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم، فقال رجُلٌ: ما أُبالي ألَّا أعمَلَ عمَلًا بعد الإسلامِ إلا أن أَسقِيَ الحاجَّ، وقال آخَرُ: ما أُبالي ألَّا أعمَلَ عمَلًا بعد الإسلامِ إلا أن أعمُرَ المسجدَ الحرامَ، وقال آخَرُ: الجهادُ في سبيلِ اللهِ أفضَلُ ممَّا قُلْتم، فزجَرَهم عُمَرُ، وقال: لا تَرفَعوا أصواتَكم عند مِنبَرِ رسولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم، وهو يومُ الجمعةِ، ولكن إذا صلَّيْتُ الجمعةَ دخَلْتُ فاستفتَيْتُه فيما اختلَفْتم فيه؛ فأنزَلَ اللهُ عز وجل: {أَجَعَلْتُمْ سِقَايَةَ اْلْحَآجِّ} [التوبة: 19] الآيةَ إلى آخِرِها». أخرجه مسلم (١٨٧٩).

* قوله تعالى: {اْلَّذِينَ يَلْمِزُونَ اْلْمُطَّوِّعِينَ مِنَ اْلْمُؤْمِنِينَ فِي اْلصَّدَقَٰتِ وَاْلَّذِينَ لَا يَجِدُونَ إِلَّا جُهْدَهُمْ} [التوبة: 79]:

عن أبي مسعودٍ عُقْبةَ بن عمرٍو رضي الله عنه، قال: «لمَّا نزَلتْ آيةُ الصَّدقةِ كنَّا نُحامِلُ، فجاءَ رجُلٌ فتصدَّقَ بشيءٍ كثيرٍ، فقالوا: مُرائي، وجاءَ رجُلٌ فتصدَّقَ بصاعٍ، فقالوا: إنَّ اللهَ لَغنيٌّ عن صاعِ هذا؛ فنزَلتِ: {اْلَّذِينَ يَلْمِزُونَ اْلْمُطَّوِّعِينَ مِنَ اْلْمُؤْمِنِينَ فِي اْلصَّدَقَٰتِ وَاْلَّذِينَ لَا يَجِدُونَ إِلَّا جُهْدَهُمْ} [التوبة: 79] الآية». أخرجه البخاري (١٤١٥).

* قوله تعالى: {وَلَا تُصَلِّ عَلَىٰٓ أَحَدٖ مِّنْهُم مَّاتَ أَبَدٗا وَلَا تَقُمْ عَلَىٰ قَبْرِهِۦٓۖ} [التوبة: 84]:

عن عبدِ اللهِ بنِ عُمَرَ رضي الله عنهما: «أنَّ عبدَ اللهِ بنَ أُبَيٍّ لمَّا تُوُفِّيَ جاءَ ابنُه إلى النبيِّ ﷺ، فقال: يا رسولَ اللهِ، أعطِني قميصَك أُكفِّنْهُ فيه، وصَلِّ عليه، واستغفِرْ له، فأعطاه النبيُّ ﷺ قميصَه، فقال: آذِنِّي أُصلِّي عليه، فآذَنَه، فلمَّا أراد أن يُصلِّيَ عليه جذَبَه عُمَرُ رضي الله عنه، فقال: أليس اللهُ نهاك أن تُصلِّيَ على المنافِقين؟ فقال: أنا بين خِيرَتَينِ، قال: {اْسْتَغْفِرْ لَهُمْ أَوْ لَا تَسْتَغْفِرْ لَهُمْ إِن تَسْتَغْفِرْ لَهُمْ سَبْعِينَ مَرَّةٗ فَلَن يَغْفِرَ اْللَّهُ لَهُمْۚ} [التوبة: 80]، فصلَّى عليه؛ فنزَلتْ: {وَلَا تُصَلِّ عَلَىٰٓ أَحَدٖ مِّنْهُم مَّاتَ أَبَدٗا وَلَا تَقُمْ عَلَىٰ قَبْرِهِۦٓۖ} [التوبة: 84]». أخرجه البخاري (١٢٦٩).

* قوله تعالى: {مَا كَانَ لِلنَّبِيِّ وَاْلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَن يَسْتَغْفِرُواْ لِلْمُشْرِكِينَ وَلَوْ كَانُوٓاْ أُوْلِي قُرْبَىٰ مِنۢ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمْ أَنَّهُمْ أَصْحَٰبُ اْلْجَحِيمِ} [التوبة: 113]:

عن المسيَّبِ بن حَزْنٍ رضي الله عنه، قال: «لمَّا حضَرتْ أبا طالبٍ الوفاةُ جاءَه رسولُ اللهِ ﷺ، فوجَدَ عنده أبا جهلٍ، وعبدَ اللهِ بنَ أبي أُمَيَّةَ بنِ المُغيرةِ، فقال رسولُ اللهِ ﷺ: «يا عَمِّ، قُلْ: لا إلهَ إلا اللهُ، كلمةً أشهَدُ لك بها عند اللهِ»، فقال أبو جهلٍ وعبدُ اللهِ بنُ أبي أُمَيَّةَ: يا أبا طالبٍ، أتَرغَبُ عن مِلَّةِ عبدِ المطَّلِبِ؟ فلَمْ يَزَلْ رسولُ اللهِ ﷺ يَعرِضُها عليه، ويُعِيدُ له تلك المقالةَ، حتى قال أبو طالبٍ آخِرَ ما كلَّمهم: هو على مِلَّةِ عبدِ المطَّلِبِ، وأبى أن يقولَ: لا إلهَ إلا اللهُ، فقال رسولُ اللهِ ﷺ: «أمَا واللهِ لَأستغفِرَنَّ لك ما لم أُنْهَ عنك»؛ فأنزَلَ اللهُ عز وجل: {مَا كَانَ لِلنَّبِيِّ وَاْلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَن يَسْتَغْفِرُواْ لِلْمُشْرِكِينَ وَلَوْ كَانُوٓاْ أُوْلِي قُرْبَىٰ مِنۢ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمْ أَنَّهُمْ أَصْحَٰبُ اْلْجَحِيمِ} [التوبة: 113]». أخرجه مسلم (٢٤).

* قوله تعالى: {وَعَلَى اْلثَّلَٰثَةِ اْلَّذِينَ خُلِّفُواْ حَتَّىٰٓ إِذَا ضَاقَتْ عَلَيْهِمُ اْلْأَرْضُ بِمَا رَحُبَتْ وَضَاقَتْ عَلَيْهِمْ أَنفُسُهُمْ وَظَنُّوٓاْ أَن لَّا مَلْجَأَ مِنَ اْللَّهِ إِلَّآ إِلَيْهِ ثُمَّ تَابَ عَلَيْهِمْ لِيَتُوبُوٓاْۚ إِنَّ اْللَّهَ هُوَ اْلتَّوَّابُ اْلرَّحِيمُ} [التوبة: 118]:

نزَلتْ في (كعبِ بن مالكٍ)، و(مُرَارةَ بنِ الرَّبيعِ)، و(هلالِ بنِ أُمَيَّةَ).

والحديثُ يَروِيه عبدُ اللهِ بن كعبٍ، عن أبيه كعبِ بن مالكٍ رضي الله عنه، قال: «لم أتخلَّفْ عن رسولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم في غزوةٍ غزاها قطُّ، إلا في غزوةِ تَبُوكَ، غيرَ أنِّي قد تخلَّفْتُ في غزوةِ بَدْرٍ، ولم يُعاتِبْ أحدًا تخلَّفَ عنه، إنَّما خرَجَ رسولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم والمسلمون يُريدون عِيرَ قُرَيشٍ، حتى جمَعَ اللهُ بَيْنهم وبين عدوِّهم على غيرِ ميعادٍ، ولقد شَهِدتُّ مع رسولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم ليلةَ العَقَبةِ، حِينَ تواثَقْنا على الإسلامِ، وما أُحِبُّ أنَّ لي بها مَشهَدَ بَدْرٍ، وإن كانت بَدْرٌ أذكَرَ في الناسِ منها، وكان مِن خَبَري حِينَ تخلَّفْتُ عن رسولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم في غزوةِ تَبُوكَ: أنِّي لم أكُنْ قطُّ أقوى ولا أيسَرَ منِّي حِينَ تخلَّفْتُ عنه في تلك الغزوةِ، واللهِ ما جمَعْتُ قَبْلها راحلتَينِ قطُّ، حتى جمَعْتُهما في تلك الغزوةِ، فغزَاها رسولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم في حَرٍّ شديدٍ، واستقبَلَ سفَرًا بعيدًا ومَفازًا، واستقبَلَ عدوًّا كثيرًا، فجَلَا للمسلمين أمْرَهم لِيتأهَّبوا أُهْبةَ غَزْوِهم، فأخبَرَهم بوجهِهم الذي يريدُ، والمسلمون مع رسولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم كثيرٌ، ولا يَجمَعُهم كتابٌ حافظٌ، يريدُ بذلك الدِّيوانَ، قال كعبٌ: فقَلَّ رجُلٌ يريدُ أن يَتغيَّبَ، يظُنُّ أنَّ ذلك سيَخفَى له، ما لم يَنزِلْ فيه وَحْيٌ مِن اللهِ عز وجل، وغزَا رسولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم تلك الغزوةَ حِينَ طابتِ الثِّمارُ والظِّلالُ، فأنا إليها أصعَرُ، فتجهَّزَ رسولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم والمسلمون معه، وطَفِقْتُ أغدو لكي أتجهَّزَ معهم، فأرجِعُ ولم أقضِ شيئًا، وأقولُ في نفسي: أنا قادرٌ على ذلك إذا أرَدتُّ، فلم يَزَلْ ذلك يَتمادى بي حتى استمَرَّ بالناسِ الجِدُّ، فأصبَحَ رسولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم غاديًا والمسلمون معه، ولم أقضِ مِن جَهازي شيئًا، ثم غدَوْتُ فرجَعْتُ ولم أقضِ شيئًا، فلم يَزَلْ ذلك يَتمادى بي حتى أسرَعوا، وتفارَطَ الغَزْوُ، فهمَمْتُ أن أرتحِلَ فأُدرِكَهم، فيا لَيْتني فعَلْتُ، ثم لم يُقدَّرْ ذلك لي، فطَفِقْتُ إذا خرَجْتُ في الناسِ بعد خروجِ رسولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم يحزُنُني أنِّي لا أرى لي أُسْوةً إلا رجُلًا مغموصًا عليه في النِّفاقِ، أو رجُلًا ممَّن عذَرَ اللهُ مِن الضُّعفاءِ، ولم يذكُرْني رسولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم حتى بلَغَ تَبُوكَ، فقال وهو جالسٌ في القومِ بتَبُوكَ: «ما فعَلَ كعبُ بنُ مالكٍ؟»، قال رجُلٌ مِن بَني سَلِمةَ: يا رسولَ اللهِ، حبَسَه بُرْداه والنَّظرُ في عِطْفَيهِ، فقال له مُعاذُ بنُ جبلٍ: بئسَ ما قلتَ، واللهِ يا رسولَ اللهِ، ما عَلِمْنا عليه إلا خيرًا، فسكَتَ رسولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم، فبينما هو على ذلك، رأى رجُلًا مُبيِّضًا، يزُولُ به السَّرابُ، فقال رسولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «كُنْ أبا خَيْثمةَ»، فإذا هو أبو خَيْثمةَ الأنصاريُّ، وهو الذي تصدَّقَ بصاعِ التَّمْرِ حِينَ لمَزَه المنافِقون».

فقال كعبُ بن مالكٍ: فلمَّا بلَغَني أنَّ رسولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قد توجَّهَ قافلًا مِن تَبُوكَ، حضَرَني بَثِّي، فطَفِقْتُ أتذكَّرُ الكَذِبَ وأقولُ: بِمَ أخرُجُ مِن سَخَطِه غدًا؟ وأستعينُ على ذلك كلَّ ذي رأيٍ مِن أهلي، فلمَّا قيل لي: إنَّ رسولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قد أظَلَّ قادمًا، زاحَ عنِّي الباطلُ، حتى عرَفْتُ أنِّي لن أنجوَ منه بشيءٍ أبدًا، فأجمَعْتُ صِدْقَه، وصبَّحَ رسولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم قادمًا، وكان إذا قَدِمَ مِن سَفَرٍ، بدَأَ بالمسجدِ فركَعَ فيه ركعتَينِ، ثم جلَسَ للناسِ، فلمَّا فعَلَ ذلك جاءه المخلَّفون، فطَفِقوا يَعتذِرون إليه، ويَحلِفون له، وكانوا بِضْعةً وثمانين رجُلًا، فقَبِلَ منهم رسولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم علانيتَهم، وبايَعَهم، واستغفَرَ لهم، ووكَلَ سرائرَهم إلى اللهِ، حتى جئتُ، فلمَّا سلَّمْتُ تبسَّمَ تبسُّمَ المُغضَبِ، ثم قال: «تعالَ»، فجئتُ أمشي حتى جلَسْتُ بين يدَيهِ، فقال لي: «ما خلَّفَك؟ ألم تكُنْ قد ابتَعْتَ ظَهْرَك؟»، قال: قلتُ: يا رسولَ اللهِ، إنِّي واللهِ لو جلَسْتُ عند غيرِك مِن أهلِ الدُّنيا، لَرأَيْتُ أنِّي سأخرُجُ مِن سَخَطِه بعُذْرٍ، ولقد أُعطِيتُ جدَلًا، ولكنِّي واللهِ لقد عَلِمْتُ، لَئِنْ حدَّثْتُك اليومَ حديثَ كَذِبٍ تَرضَى به عنِّي، لَيُوشِكَنَّ اللهُ أن يُسخِطَك عليَّ، ولَئِنْ حدَّثْتُك حديثَ صِدْقٍ تجدُ عليَّ فيه، إنِّي لَأرجو فيه عُقْبى اللهِ، واللهِ ما كان لي عُذْرٌ، واللهِ ما كنتُ قطُّ أقوى ولا أيسَرَ منِّي حين تخلَّفْتُ عنك، قال رسولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «أمَّا هذا فقد صدَقَ؛ فقُمْ حتى يَقضِيَ اللهُ فيك»، فقُمْتُ، وثارَ رجالٌ مِن بَني سَلِمةَ فاتَّبَعوني، فقالوا لي: واللهِ ما عَلِمْناك أذنَبْتَ ذَنْبًا قبل هذا، لقد عجَزْتَ في ألَّا تكونَ اعتذَرْتَ إلى رسولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم بما اعتذَرَ به إليه المخلَّفون، فقد كان كافيَك ذَنْبَك استغفارُ رسولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم لك، قال: فواللهِ ما زالوا يُؤنِّبوني حتى أرَدتُّ أن أرجِعَ إلى رسولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فأُكذِّبَ نفسي، قال: ثم قلتُ لهم: هل لَقِيَ هذا معي مِن أحدٍ؟ قالوا: نَعم، لَقِيَه معك رجُلانِ، قالا مِثْلَ ما قلتَ، فقيل لهما مثلُ ما قيل لك، قال: قلتُ: مَن هما؟ قالوا: مُرَارةُ بنُ الرَّبيعِ العامريُّ، وهِلالُ بنُ أُمَيَّةَ الواقِفيُّ، قال: فذكَروا لي رجُلَينِ صالحَينِ قد شَهِدا بَدْرًا، فيهما أُسْوةٌ، قال: فمضَيْتُ حين ذكَروهما لي.

قال: ونهَى رسولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم المسلمين عن كلامِنا - أيُّها الثلاثةُ - مِن بَيْنِ مَن تخلَّفَ عنه.

قال: فاجتنَبَنا الناسُ، وقال: تغيَّروا لنا، حتى تنكَّرتْ لي في نفسي الأرضُ، فما هي بالأرضِ التي أعرِفُ، فلَبِثْنا على ذلك خَمْسين ليلةً، فأمَّا صاحبايَ فاستكانا وقعَدا في بيوتِهما يَبكيانِ، وأمَّا أنا فكنتُ أشَبَّ القومِ وأجلَدَهم، فكنتُ أخرُجُ فأشهَدُ الصَّلاةَ، وأطُوفُ في الأسواقِ، ولا يُكلِّمُني أحدٌ، وآتي رسولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم فأُسلِّمُ عليه وهو في مَجلِسِه بعد الصَّلاةِ، فأقولُ في نفسي: هل حرَّكَ شَفَتَيهِ برَدِّ السلامِ أم لا؟ ثم أُصلِّي قريبًا منه، وأُسارِقُه النَّظرَ، فإذا أقبَلْتُ على صلاتي نظَرَ إليَّ، وإذا التفَتُّ نحوَه أعرَضَ عنِّي، حتى إذا طالَ ذلك عليَّ مِن جَفْوةِ المسلمين، مشَيْتُ حتى تسوَّرْتُ جدارَ حائطِ أبي قَتادةَ، وهو ابنُ عَمِّي، وأحَبُّ الناسِ إليَّ، فسلَّمْتُ عليه، فواللهِ ما رَدَّ عليَّ السلامَ، فقلتُ له: يا أبا قَتادةَ، أنشُدُك باللهِ هل تَعلَمَنَّ أنِّي أُحِبُّ اللهَ ورسولَه؟ قال: فسكَتَ، فعُدتُّ فناشَدتُّه، فسكَتَ، فعُدتُّ فناشَدتُّه، فقال: اللهُ ورسولُهُ أعلَمُ، ففاضت عينايَ، وتولَّيْتُ حتى تسوَّرْتُ الجدارَ.

فبَيْنا أنا أمشي في سوقِ المدينةِ، إذا نَبَطيٌّ مِن نََبَطِ أهلِ الشامِ، ممَّن قَدِمَ بالطعامِ يَبِيعُه بالمدينةِ، يقولُ: مَن يدُلُّ على كعبِ بن مالكٍ؟ قال: فطَفِقَ الناسُ يُشيرون له إليَّ، حتى جاءَني، فدفَعَ إليَّ كتابًا مِن مَلِكِ غسَّانَ، وكنتُ كاتبًا، فقرَأْتُه، فإذا فيه: أمَّا بعدُ، فإنَّه قد بلَغَنا أنَّ صاحِبَك قد جفَاك، ولم يَجعَلْك اللهُ بدارِ هوانٍ ولا مَضِيعةٍ، فالحَقْ بنا نُواسِك، قال: فقلتُ حين قرَأْتُها: وهذه أيضًا مِن البلاءِ، فتيامَمْتُ بها التَّنُّورَ، فسجَرْتُها بها.

حتى إذا مضَتْ أربعون مِن الخَمْسين، واستلبَثَ الوَحْيُ؛ إذا رسولُ رسولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم يأتيني، فقال: إنَّ رسولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يأمُرُك أن تعتزِلَ امرأتَك، قال: فقلتُ: أُطلِّقُها أم ماذا أفعَلُ؟ قال: لا، بل اعتزِلْها، فلا تَقرَبَنَّها، قال: فأرسَلَ إلى صاحِبَيَّ بمِثْلِ ذلك، قال: فقلتُ لامرأتي: الحَقِي بأهلِكِ فكُوني عندهم حتى يَقضِيَ اللهُ في هذا الأمرِ، قال: فجاءت امرأةُ هلالِ بنِ أُمَيَّةَ رسولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، فقالت له: يا رسولَ اللهِ، إنَّ هلالَ بنَ أُمَيَّةَ شيخٌ ضائعٌ ليس له خادمٌ، فهل تَكرَهُ أن أخدُمَه؟ قال: لا، ولكن لا يَقرَبَنَّكِ، فقالت: إنَّه واللهِ ما به حركةٌ إلى شيءٍ، وواللهِ ما زالَ يَبكي منذ كان مِن أمرِه ما كان إلى يومِه هذا، قال: فقال لي بعضُ أهلي: لو استأذَنْتَ رسولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم في امرأتِك؟ فقد أَذِنَ لامرأةِ هلالِ بنِ أُمَيَّةَ أن تخدُمَه، قال: فقلتُ: لا أستأذِنُ فيها رسولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، وما يُدرِيني ماذا يقولُ رسولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إذا استأذَنْتُه فيها، وأنا رجُلٌ شابٌّ، قال: فلَبِثْتُ بذلك عَشْرَ ليالٍ، فكمَلَ لنا خمسون ليلةً مِن حِينَ نُهِيَ عن كلامِنا، قال: ثم صلَّيْتُ صلاةَ الفجرِ صباحَ خَمْسين ليلةً على ظَهْرِ بيتٍ مِن بيوتِنا، فبَيْنا أنا جالسٌ على الحالِ التي ذكَرَ اللهُ عز وجل منَّا، قد ضاقَتْ عليَّ نفسي، وضاقَتْ عليَّ الأرضُ بما رحُبَتْ؛ سَمِعْتُ صوتَ صارخٍ أوفَى على سَلْعٍ، يقولُ بأعلى صوتِه: يا كعبُ بنَ مالكٍ، أبشِرْ، قال: فخرَرْتُ ساجدًا، وعرَفْتُ أنْ قد جاء فَرَجٌ.

قال: فآذَنَ رسولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم الناسَ بتوبةِ اللهِ علينا حِينَ صلَّى صلاةَ الفجرِ، فذهَبَ الناسُ يُبشِّروننا، فذهَبَ قِبَلَ صاحَبَيَّ مبشِّرون، وركَضَ رجُلٌ إليَّ فرَسًا، وسعى ساعٍ مِن أسلَمَ قِبَلي، وأوفى الجبلَ، فكان الصوتُ أسرَعَ مِن الفرَسِ، فلمَّا جاءني الذي سَمِعْتُ صوتَه يُبشِّرُني، فنزَعْتُ له ثَوْبَيَّ، فكسَوْتُهما إيَّاه ببِشارتِه، واللهِ ما أملِكُ غيرَهما يومَئذٍ، واستعَرْتُ ثَوْبَيْنِ فلَبِسْتُهما، فانطلَقْتُ أتأمَّمُ رسولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، يَتلقَّاني الناسُ فوجًا فوجًا، يُهنِّئوني بالتوبةِ، ويقولون: لِتَهْنِئْكُ توبةُ اللهِ عليك، حتى دخَلْتُ المسجدَ، فإذا رسولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم جالسٌ في المسجدِ، وحَوْله الناسُ، فقام طَلْحةُ بنُ عُبَيدِ اللهِ يُهَروِلُ حتى صافَحَني وهنَّأني، واللهِ ما قامَ رجُلٌ مِن المهاجِرين غيرُه.

قال: فكان كعبٌ لا يَنساها لطَلْحةَ.

قال كعبٌ: فلمَّا سلَّمْتُ على رسولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قال وهو يبرُقُ وجهُه مِن السُّرورِ، ويقولُ: «أبشِرْ بخيرِ يومٍ مَرَّ عليك منذُ ولَدَتْك أمُّك»، قال: فقلتُ: أمِنْ عندِك يا رسولَ اللهِ، أم مِن عندِ اللهِ؟ فقال: «لا، بل مِن عندِ اللهِ»، وكان رسولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إذا سُرَّ استنارَ وجهُه، كأنَّ وَجْهَه قطعةُ قمَرٍ، قال: وكنَّا نَعرِفُ ذلك.

قال: فلمَّا جلَسْتُ بين يدَيهِ، قلتُ: يا رسولَ اللهِ، إنَّ مِن تَوْبتي أن أنخلِعَ مِن مالي صدقةً إلى اللهِ، وإلى رسولِه صلى الله عليه وسلم، فقال رسولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «أمسِكْ بعضَ مالِك؛ فهو خيرٌ لك»، قال: فقلتُ: فإنِّي أُمسِكُ سَهْمي الذي بخَيْبرَ.

قال: وقلتُ: يا رسولَ اللهِ، إنَّ اللهَ إنَّما أنجاني بالصِّدْقِ، وإنَّ مِن تَوْبتي ألَّا أُحدِّثَ إلا صِدْقًا ما بَقِيتُ.

قال: فواللهِ ما عَلِمْتُ أنَّ أحدًا مِن المسلمين أبلاه اللهُ في صِدْقِ الحديثِ، منذُ ذكَرْتُ ذلك لرسولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم إلى يومي هذا، أحسَنَ ممَّا أبلاني اللهُ به، واللهِ ما تعمَّدتُّ كَذْبةً منذُ قلتُ ذلك لرسولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم إلى يومي هذا، وإنِّي لأرجو أن يَحفَظَني اللهُ فيما بَقِيَ.

قال: فأنزَلَ اللهُ عز وجل: {لَّقَد تَّابَ اْللَّهُ عَلَى اْلنَّبِيِّ وَاْلْمُهَٰجِرِينَ وَاْلْأَنصَارِ اْلَّذِينَ اْتَّبَعُوهُ فِي سَاعَةِ اْلْعُسْرَةِ مِنۢ بَعْدِ مَا كَادَ يَزِيغُ قُلُوبُ فَرِيقٖ مِّنْهُمْ ثُمَّ تَابَ عَلَيْهِمْۚ إِنَّهُۥ بِهِمْ رَءُوفٞ رَّحِيمٞ ١١٧ وَعَلَى اْلثَّلَٰثَةِ اْلَّذِينَ خُلِّفُواْ حَتَّىٰٓ إِذَا ضَاقَتْ عَلَيْهِمُ اْلْأَرْضُ بِمَا رَحُبَتْ وَضَاقَتْ عَلَيْهِمْ أَنفُسُهُمْ} [التوبة: 117-118] حتى بلَغَ: {يَٰٓأَيُّهَا اْلَّذِينَ ءَامَنُواْ اْتَّقُواْ اْللَّهَ وَكُونُواْ مَعَ اْلصَّٰدِقِينَ} [التوبة: 119].

قال كعبٌ: واللهِ ما أنعَمَ اللهُ عليَّ مِن نعمةٍ قطُّ، بعد إذ هداني اللهُ للإسلامِ، أعظَمَ في نفسي مِن صِدْقي رسولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، ألَّا أكونَ كذَبْتُه فأهلِكَ كما هلَكَ الذين كذَبوا؛ إنَّ اللهَ قال لِلَّذين كذَبُوا حِينَ أنزَلَ الوَحْيَ شرَّ ما قال لأحدٍ، وقال اللهُ: {سَيَحْلِفُونَ ‌بِاْللَّهِ ‌لَكُمْ إِذَا اْنقَلَبْتُمْ إِلَيْهِمْ لِتُعْرِضُواْ عَنْهُمْۖ فَأَعْرِضُواْ عَنْهُمْۖ إِنَّهُمْ رِجْسٞۖ وَمَأْوَىٰهُمْ جَهَنَّمُ جَزَآءَۢ بِمَا كَانُواْ يَكْسِبُونَ ٩٥ يَحْلِفُونَ لَكُمْ لِتَرْضَوْاْ عَنْهُمْۖ فَإِن تَرْضَوْاْ عَنْهُمْ فَإِنَّ اْللَّهَ لَا يَرْضَىٰ عَنِ اْلْقَوْمِ اْلْفَٰسِقِينَ} [التوبة: 95-96].

قال كعبٌ: كنَّا خُلِّفْنا - أيُّها الثلاثةُ - عن أمرِ أولئك الذين قَبِلَ منهم رسولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم حِينَ حلَفوا له، فبايَعَهم، واستغفَرَ لهم، وأرجأَ رسولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم أمْرَنا حتى قضى اللهُ فيه، فبذلك قال اللهُ عز وجل: {وَعَلَى ‌اْلثَّلَٰثَةِ ‌اْلَّذِينَ ‌خُلِّفُواْ} [التوبة: 118]، وليس الذي ذكَرَ اللهُ ممَّا خُلِّفْنا تخلُّفَنا عن الغَزْوِ، وإنَّما هو تخليفُه إيَّانا، وإرجاؤُه أمْرَنا عمَّن حلَفَ له واعتذَرَ إليه فقَبِلَ منه». أخرجه مسلم (٢٧٦٩).

* سورةُ (التوبة):

سُمِّيتْ بذلك لكثرةِ ذِكْرِ التوبة وتَكْرارها فيها، وذِكْرِ توبة الله على الثلاثة الذين تخلَّفوا يومَ غزوة (تَبُوكَ)، ولها عِدَّةُ أسماءٍ؛ من ذلك:

* سورةُ (براءةَ):

وقد اشتهَر هذا الاسمُ بين الصحابة؛ فعن البَراء رضي الله عنه، قال: «آخِرُ سورةٍ نزَلتْ كاملةً براءةُ». أخرجه البخاري (٤٣٦٤).

* (الفاضحةُ):

فعن سعيدِ بن جُبَيرٍ رحمه الله، قال: «قلتُ لابنِ عباسٍ: سورةُ التَّوبةِ، قال: آلتَّوبةُ؟ قال: بل هي الفاضحةُ؛ ما زالت تَنزِلُ: {وَمِنْهُمْ} {وَمِنْهُمْ} حتى ظَنُّوا أن لا يَبقَى منَّا أحدٌ إلا ذُكِرَ فيها». أخرجه مسلم (٣٠٣١).

قال ابنُ عاشورٍ: «ولهذه السورةِ أسماءٌ أُخَرُ، وقَعتْ في كلام السلف، من الصحابة والتابعين؛ فرُوي عن ابن عمرَ، عن ابن عباسٍ: كنَّا ندعوها - أي سورةَ (براءةَ) -: «المُقَشقِشَة» - بصيغةِ اسم الفاعل وتاء التأنيث، مِن قَشْقَشَه: إذا أبرَاه مِن المرضِ -، كان هذا لقبًا لها ولسورة (الكافرون)؛ لأنهما تُخلِّصان مَن آمن بما فيهما من النفاق والشرك؛ لِما فيهما من الدعاء إلى الإخلاص، ولِما فيهما من وصفِ أحوال المنافقين ...

وعن حُذَيفةَ: أنه سمَّاها سورة (العذاب)؛ لأنها نزلت بعذاب الكفار؛ أي: عذاب القتلِ والأخذِ حين يُثقَفون.

وعن عُبَيد بن عُمَير: أنه سمَّاها (المُنقِّرة) - بكسرِ القاف مشدَّدةً -؛ لأنها نقَّرتْ عما في قلوب المشركين...». "التحرير والتنوير" (10 /96).

وقد بلغ عددُ أسمائها (21) اسمًا في موسوعة "التفسير الموضوعي" (3 /187 وما بعدها).

* أمَر عُمَرُ بن الخطَّابِ رضي الله عنه أن يَتعلَّمَها الرِّجالُ لِما فيها من أحكام الجهاد:

فقد كتَب عُمَرُ بنُ الخطَّابِ رضي الله عنه: «تعلَّمُوا سورةَ براءةَ، وعَلِّموا نساءَكم سورةَ النُّورِ». "فضائل القرآن" للقاسم بن سلَّام (ص241).

جاءت موضوعاتُ سورة (التَّوبة) على الترتيب الآتي:

1. نبذُ العهد مع المشركين (١-٢٤).

2. غزوة (حُنَين) (٢٥-٢٧).

3. قتال أهل الكتاب لفساد عقيدتهم (٢٨-٣٥).

4. تحديد الأشهُرِ الحُرُم (٣٦-٣٧).

5. غزوة تَبُوكَ (٣٨- ١٢٧).

6. صفات المؤمنين، وعقدُ البَيْعة مع الله تعالى.

7. أنواع المنافقين، والمعذِّرون من الأعراب.

8. صفات المنافقين والمؤمنين، وجزاؤهم.

9. أصناف أهل الزكاة.

10. فضحُ المتخلِّفين عن الجهاد، وصفاتهم.

11. النفير العام، والجهاد في سبيل الله.

12. علوُّ مكانة النبيِّ عليه السلام (١٢٨-١٢٩).

ينظر: "التفسير الموضوعي" لمجموعة من العلماء (3 /178).

إنَّ مقصدَ السورة الأعظم أبانت عنه أولُ كلمةٍ في السورة؛ وهي {بَرَآءَةٞ} [التوبة: 1]؛ فقد جاءت للبراءةِ من الشرك والمشركين، ومعاداةِ مَن أعرض عما دعَتْ إليه السُّوَرُ الماضية؛ مِن اتباعِ الداعي إلى الله في توحيده، واتباعِ ما يُرضيه، كما جاءت بموالاةِ مَن أقبل على الله تعالى، وأعلن توبته؛ كما حصَل مع الصحابة الذين تخلَّفوا عن الغزوِ، ثم تاب اللهُ عليهم ليتوبوا.

ينظر: "مصاعد النظر للإشراف على مقاصد السور" للبقاعي (2 /154).